দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, সহকর্মীদের মারধর!
নড়াইল, ৩১ অক্টোবর (জেলা প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) – নড়াইলের কালিয়া প্যারী শংকর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত দুই শিক্ষক হলেন সহকারী প্রধান শেখ সাহিদুর ইসলাম ও তার আপন ছোট ভাই শেখ তকিবুর রহমান।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শেখ সাহিদুর ইসলাম কোন কারণ ছাড়াই শিক্ষকদের সঙ্গে প্রায়ই দুর্ব্যবহার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাস ও চৈতালী বিশ্বাসকে মারধর করেন সহকারী প্রধান সাহিদুর ইসলাম।
চৈতালী বিশ্বাস বলেন, ঘটনার দিন (২৩ অক্টোবর) আমি সকালে শিক্ষক রুমে গিয়ে দেখি সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ সাহিদুর ইসলাম অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা করছেন। একপর্যায়ে সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাসকে হাতুড়ি দিয়ে মারতে যান সহকারী প্রধান শিক্ষক সাহিদুর ইসলাম। আমি সহ অন্য শিক্ষকরা ঠেকাতে গেলে সাহিদুর ইসলাম স্যার আমাকে ঘুসি মারেন। ঘুসিটি আমার কপালের ডান পাশে লেগে রক্তজমাট হয়ে যায়।
প্রথমে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিই। এরপর ২৭ অক্টোবর সোমবার খুলনায় গিয়ে সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, কপালের উপরিভাগে বেশ ক্ষতি হয়েছে। দুই মাস চিকিৎসা করাতে হবে। আমি চিকিৎসাধীন থাকায় ১৫ দিনের ছুটিতে আছি। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ওইদিনই প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। তবে, বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) পর্যন্ত কোন বিচার পাইনি।
আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ঘটনার দিন সহকারী প্রধান শেখ সাহিদুর ইসলাম ধারালো অস্ত্র কাস্তে ও হাতুড়ি নিয়ে শিক্ষক রুমে আমাকে মারতে আসেন। ঠেকাতে গেলে অপর শিক্ষক চৈতালী আহত হন।
এদিকে, বড় ভাই সাহিদুর ইসলাম বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুবাদে ছোট ভাই শেখ তকিবুর রহমান প্রায় দিনই ক্লাস না নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করে জমি বেচাকেনা ও মাপ দেয়ার কাজে বেরিয়ে যান। বিশেষ করে সোম ও মঙ্গলবার কালিয়া উপজেলায় জমি রেজিস্ট্রির দিনক্ষণ হওয়ায় এই দু’দিন বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে শেখ তকিবুর রহমান জমি সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের বাড়ি বিদ্যালয়ের সংলগ্ন কালিয়া পৌরসভার বেন্দা এলাকায় হওয়ায় স্থানীয় দাপট দেখিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক সাহিদুর ইসলাম ও তকিবুর রহমান স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় থাকতেন বলেও জানিয়েছেন শিক্ষকসহ স্থানীয়রা। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভোল পাল্টে শিক্ষক সাহিদুর ইসলাম ও তকিবুর রহমান বর্তমান প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় আছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে তারা সবসময় বেপরোয়া আচরণ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বিদ্যালয়টি ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি ঐতিহ্য ধরে রাখলেও বিগত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার পরিবেশ ভালো নেই বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সচেতন মহল। প্রায় ১৫ বছর আগেও বিদ্যালয়টিতে ৭০০ থেকে ৮০০ শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫১ জনে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপ্তি রানী বৈরাগী বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক শেখ সাহিদুর ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। ঘটনার দিন থেকে সাতদিনের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক নোটিশের জবাব দেবেন বলে আশা করেন তিনি।
সহকারী শিক্ষক শেখ তকিবুর রহমানের বিদ্যালয় ফাঁকি দেয়ার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক বলেন, তিনি (তকিবুর) মাঝে-মধ্যে জমির কাজ করতে যান। তবে বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে যান না বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। আর বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশের জন্য নয়, আশেপাশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান শিক্ষক দীপ্তি রানী বৈরাগী।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক শেখ সাহিদুর ইসলাম দাবি করেন, কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি বহৃস্পতিবার মীমাংসা হয়ে গেছে। অপর শিক্ষক শেখ তকিবুর রহমান দাবি করে বলেন, স্কুল ফাঁকি দিয়ে অন্য কাজ করছি না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ঠিক নয়।
কালিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। প্রধান শিক্ষকের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। এরপর কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, দুই শিক্ষককে মারধরের ঘটনা এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কোনো বিচার না পাওয়ায় ভুক্তভোগীরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, বিদ্যালয়টিতে দ্রুত শিক্ষার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হোক। শিক্ষার সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিদ্যালয় থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক শেখ সাহিদুর ইসলাম ও শেখ তকিবুর রহমানকে দ্রুত অপসারণ করে দুই শিক্ষককে মারধরের বিচার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
What's Your Reaction?

