মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই বাংলাদেশীর দাফন

Sep 8, 2025 - 02:25
 0  302
মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই বাংলাদেশীর দাফন
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

মুসা মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চোখে ছিলো স্বপ্ন। হাতে ছিলো অল্প কিছু টাকা। সেই স্বপ্নকে বড় করার জন্যই মালয়েশিয়ার পথে রওনা দিয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের দুই তরুণ তুহিন আলী ও শামীম রেজা।

পরিবারের ভাগ্য ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে তারা পাড়ি জমিয়েছিলেন হাজার মাইল দূরের এক অচেনা দেশে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। তারা ফিরলেন লাশ হয়ে।

৩১ আগস্ট মালয়েশিয়ার পাহাং রাজ্যের কুয়ালা লিপিস জেলার সুঙ্গাই কোয়ান এলাকার এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এই দুই তরুণের। খবর পৌঁছাতেই শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে তাদের পরিবার ও গ্রাম। অবশেষে লাশ ফেরত আসার পর নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন হয়েছে তাদের।

গোপালনগর গ্রামের শুকুরুদ্দিন কালুর ছেলে তুহিন আলী (২৫) প্রায় আড়াই বছর আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। ওদিকে নসিবন্দি নগর গ্রামের মো. কাবিলের ছেলে শামীম রেজা (২৩) একই বাগানে কাজ করতেন। দুজনের লক্ষ্য ছিল পরিবারকে দাঁড় করানো, বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটানো।

কিন্তু সরকারি ছুটির দিনে ওভারটাইম কাজে গিয়ে ফেরার পথে ঘটে দুর্ঘটনা। মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে পিকআপ ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। লাফ দিয়ে বেঁচে যান অন্য শ্রমিকরা, কিন্তু রক্ষা পাননি তুহিন ও শামীম। পাহাড়ি রাস্তায় গড়িয়ে পড়ে পিকআপ, আর সেই সঙ্গে নিভে যায় দুই তরুণের জীবন।

তুহিনের মামা শফিকুল ইসলাম বলেন, “আড়াই বছর আগে ভালো ভবিষ্যতের জন্য তুহিন দেশ ছেড়েছিল। ভেবেছিলাম সংসারের অভাব মিটবে। কিন্তু এখন সব শেষ। আমরা শুধু তার লাশটাই ফেরত পেলাম।

শামীমের বাড়িতেও একই দৃশ্য। স্বজনদের বুকফাটা কান্না থামছে না। প্রতিবেশীরাও শোকে স্তব্ধ।

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির মুন্সি বলেন, “আমাদের দুইজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা কাজ শেষে ফেরার পথে প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা গভীরভাবে শোকাহত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

প্রতিদিন প্রবাস থেকে দেশে আসে কোটি কোটি টাকা। সেই টাকার উপর দাঁড়িয়ে থাকে আমাদের অর্থনীতি। কিন্তু সেই টাকার পেছনে লুকিয়ে থাকে কত কষ্ট, কত জীবন হারানোর গল্প যা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। তুহিন ও শামীমও সেই গল্পের অংশ হয়ে গেলেন।

তাদের মৃত্যু শুধু দুই পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য এক বেদনার সংবাদ। তারা ছিলেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা, যাদের ঘামে গড়ে ওঠে দেশের অর্থনীতির ভিত্তি। কিন্তু নিজেরাই হারিয়ে গেলেন ভাগ্য বদলের চেষ্টায়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online