'জলাতঙ্কে প্রতি ৯ মিনিটে একজনের মৃত্যু হয়' - গবেষণা

Oct 2, 2025 - 13:44
 0  7
'জলাতঙ্কে প্রতি ৯ মিনিটে একজনের মৃত্যু হয়' - গবেষণা
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

ময়মনসিংহ, ২৯ সেপ্টেম্বর (বাকৃবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) – প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে মারা যায়। যা প্রতি ৯ মিনিটে বিশ্বে একজনের মৃত্যু ঘটায়। এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশেও পরিস্থিতি শঙ্কাজনক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার মানুষ জলাতঙ্কে মারা যায়। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় চল্লিশ শতাংশই শিশু। প্রতিবছর প্রায় ২ লক্ষ মানুষ পশু দ্বারা কামড়ের শিকার হন। এছাড়াও ৩ হাজারের বেশি প্রাণি প্রতিবছর জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। 
শনিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস উপলক্ষে এক অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা। 
সেমিনারে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বেনাজির আহমেদ এবং বাকৃবি মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. কেএইচএম নাজমুল হোসাইন নাজির। 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিএম মুজিবর রহমান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কাজী রফিকুল ইসলাম।  সভাপতিত্ব করেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান। 
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে কুকুর-বাহিত জলাতঙ্কে মানুষের মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনা আমাদের মূল লক্ষ্য। জলাতঙ্কের প্রতিষেধক আবিষ্কারক লুই পাস্তুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৭ সাল থেকে দিবসটি পালন করছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর র‍্যাবিস কন্ট্রোল (জিএআরসি)। ।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে আনুমানিক ১৬ থেকে ২০ লাখ বিচরণকারী কুকুর রয়েছে। এরাই দেশের ৯৫ শতাংশ জলাতঙ্ক ঘটনার জন্য দায়ী। ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে দেশে নিশ্চিত পশু জলাতঙ্ক কেস ছিল ৬০৬টি। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কিছু জেলায় নতুন হুমকি হিসেবে বিড়ালও আবির্ভূত হয়েছে। এসব এলাকায় মোট কামড়ের ঘটনার প্রায় ৫৩ শতাংশের জন্য বিড়াল দায়ী।
তারা বলেন, ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে। গ্রামীণ এলাকায় সীমিত স্বাস্থ্যসেবা ও কুসংস্কারের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্তরা আধুনিক চিকিৎসার বদলে ঝাড়ফুঁককারী বা ওঝাদের কাছে ছুটে যান। অথচ সরকার ২০১১ সাল থেকে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক সরবরাহ করছে।
রোগটির সংক্রমণ ও লক্ষণের বিষয়ে বলেন, সংক্রমণ সাধারণত চারভাবে ঘটে—পশুর কামড়, আঁচড়, আক্রান্ত প্রাণীর লালা ক্ষত বা চোখে লাগা এবং খুব বিরল ক্ষেত্রে অন্যান্য সংক্রমণ রুটে। জলাতঙ্ক আক্রান্ত প্রাণী প্রথমে অস্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শন করে, এরপর ক্ষিপ্ত অবস্থায় হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। পরবর্তী পর্যায়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত লক্ষণ দেখা দেয়। একবার ক্লিনিক্যাল লক্ষণ দেখা দিলে জলাতঙ্ক প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী।
রোগটির প্রতিরোধের বিষয়ে বাকৃবি ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্ক সকল উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণীর জন্য এক প্রাণঘাতী রোগ। একবার রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে পৃথিবীতে কোন চিকিৎসা নেই, তবে এটি শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। শিয়াল, কুকুর বা বানর কামড়ালে বা আঁচড়ালে মানুষকে অবশ্যই মানব চিকিৎসকের কাছে এবং প্রাণীকে পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিতে হবে। প্রতিরোধে প্রি-এক্সপোজার ও পোস্ট-এক্সপোজার টিকা, আক্রান্ত প্রাণীর টিকাদান এবং জীবাণুমুক্তকরণ কার্যক্রম জরুরি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online