বিশ্ব দুগ্ধ দিবসে ২,৫০০ শিশুকে দুধ পান করানোর পরিকল্পনা

ময়মনসিংহ, ৩০ মে (বাকৃবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) – দেশে ডেয়রি শিল্পের বিকাশ এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ত্রয়োদশ বারের মতো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ‘বিশ্ব দুগ্ধ দিবস’ পালন করবে।
১ জুন দিবসটি উদযাপনের জন্য মূল প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘আসুন দুগ্ধশিল্প এবং দুধের প্রভাব উদযাপন করি’। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাকৃবির ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত স্কুলসমূহের ২ হাজার ৫০০ শিশুকে দুধ পান করানো হবে।
এর আগে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন করিডোরে শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হোম কিচেন ডেয়রি রেসিপি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ২০২৫ উদযাপনের প্রাক্কালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বাকৃবির ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম।
অধ্যাপক ডঃ আশিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন। সেখানে আমাদের প্রাপ্যতা ২৩৫ মিলি লিটার। দেশে বছরে প্রায় ১৫ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন দুধের প্রয়োজন হয়। পরিসংখ্যান বলছে, এখনও দেশে তরল দুধের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি স্থায়ীভাবে পূরণ করতে হলে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
দুধের উৎপাদন প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে অধ্যাপক আশিকুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করতে হয়। দুধের উৎপাদন ঘাটতির পেছনে নানা ধরনের সমস্যা জড়িত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ভালো জাতের দুধেল গাভীর অভাব, গো-খাদ্যের স্বল্পতা ও উচ্চ মূল্য এবং দুধ বাজারজাতকরণের জটিলতা। কয়েক বছর ধরে দেশে দুধের উৎপাদন বাড়লেও দুধ পানের আগ্রহ তেমন বাড়েনি। ফলে প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও দুধ কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না। তাই দুধের উৎপাদন বাড়াতে হলে দুধ পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এছাড়া দুধ পানের উপকারিতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং ডেয়রি উন্নয়ন বোর্ডকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দুধ প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ খাবার। খাদ্যের সব পুষ্টি উপাদান দুধে বিদ্যমান থাকায় এটিকে সুষম খাদ্য বলা হয়। দুধে থাকা ল্যাকটোজ শিশুদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকোষের বর্ধনে সহায়তা করে। জন্মের সময় মানব শিশুরা মস্তিষ্কের প্রায় ৮০ শতাংশ গঠন সম্পন্ন করে আসে। বাকি ২০ শতাংশ পরবর্তী ১৫-১৬ বছরে ধীরে ধীরে গঠিত হয়। তাই শৈশবে মস্তিষ্কের বিকাশে দুধের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যে জাতি যত বেশি দুধ পান করে, সে জাতি তত বেশি মেধাবী হয়ে ওঠে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে সর্বপ্রথম ২০০১ সালে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশেও এই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
What's Your Reaction?






