বস্তায় আদা চাষে সাফল্য ও সম্ভাবনা চাঁপাইনবাবগঞ্জে
মুসা মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
আদা একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। আদার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোন না কোন খাদ্যের সঙ্গে হয়ে থাকে। আবার কেউ চায়ের সথে বা এমনি চিবিয়ে খেয়ে থাকে। আমাদের দেশে চাহিদার তুলনায় আদার উৎপাদন হয় খুব নগন্য। তাই চাহিদার বড় একটি অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে মেটাতে হয় আমাদের।
চাষ পদ্ধতি প্রচলিত না হওয়ায় চাষিদের তেমন আগ্রহ ছিল না আদা চাষাবাদে। তবে অনলাইনে ভিডিও দেখে ও কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় কয়েক বছর থেকে আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। এ জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় আড়াই লক্ষ বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে যেভাবে:
আমের রাজধানী খ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগানের সঙ্গে আন্ত ফসল হিসেবে বস্তায় আদা চাষ করেছেন চাষিরা। আবারও কেউ ছাদের উপরে চাষ করছেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, আম বাগানে আধো ছায়া জায়গায় এবং অনাবাদি জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে বস্তায় আদা চাষ করেছেন অনেকেই। আম বাগান ও অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে বস্তায় আদা চাষ হওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি নিয়ে চাষিরা যা বলছেন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের চাষি মোঃ কামরুজ্জামান জানান, তিনি ইউটিউবে ভিডিও দেখার পর স্থানীয় কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেন। তাঁকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি অফিস থেকে আদা চাষের জন্য ৫০০টি বস্তা, আদার বীজ ও জৈব সার দেওয়া হয়। কৃষি অফিসারের পরামর্শক্রমে তিনি আম বাগানের সঙ্গে আন্ত ফসল হিসেবে ৫'শ বস্তা আদার বীজ রোপণ করেন। ইতোমধ্যে প্রতিটি বস্তায় আদা গাছ বেড়ে উঠছে। সবুজ পাতায় ভরে গেছে প্রতিটি গাছ। এর নিচে নামতে শুরু করেছে আদা। নতুন পদ্ধতির চাষাবাদ প্রথম বছরেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ চাষাবাদ ঘিরে আগামীতে ব্যাপক লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রাজারামপুর এলাকার আম চাষি আরিফ হোসেন জানান, তাঁর আম বাগানে এ বছর এক হাজার ৫‘শ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তাঁর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আম গাছের নিচে সারি সারি করে সাজানো রয়েছে আদা গাছের বস্তা। তিনি বলেন, গত বছর একজনের দেখে তিনি শুরু করেছেন আদা চাষ। আম বাগানের এই জমি পতিত পড়ে থাকতো। তাই পতিত জমিতে আদা চাষ করতে পেরে তিনি খুশি। তাঁর চাষ পদ্ধতি দেখতে প্রতিনিয়ত মানুষ আসছেন তার বাগানে। ভালো ফলন হবে বলে আশাবাদী তিনি।
আদা চাষে সম্ভাবনা কেমন:
এই অঞ্চলে আদা চাষে সম্ভাবনা কেমন বিষয় জানতে গিয়ে খোঁজ পায় কৃষক মোঃ আব্দুল জাব্বারের। তিনি সদর উপজেলার আমারক এলাকায় গতবছর থেকে বস্তায় আদা চাষ করছেন। গত বছর ৫'শ বস্তায় আদা চাষ করেছিলেন, এ বছর ৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। গত বছর প্রতি বস্তায় আদার ফলন হয়েছিল ৬'শ থেকে ৮'শ গ্রাম।
আব্দুল জাব্বার বলেন, গত বছর প্রথমবারের মতো আদা চাষ করি আম বাগানে। প্রথম বছর হওয়ার কারণে পরিচর্যা ভালো মন্দ তেমন বুঝতে পরিনি। সেজন্য হয়তো ফলন এমন হয়েছে। তবে পরিচর্যা ছাড়া তেমন খরচ না থাকায় লোকসান হয়নি। তবে এবছর গাছের গাছের চেহারা আরও ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। উৎপাদিত আদা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। মসলা জাতীয় ফসল হিসেবে এর বেশ চাহিদা রয়েছে বাজারে।
কৃষি কর্মকর্তারা যা বলছেন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমে প্রায় আড়াই লক্ষ বস্তায় আদা চাষ হচ্ছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে। জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, আদা ৮০% সানলাইট যুক্ত জমিতে চাষ করা যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমের বড় বড় বাগান রয়েছে। এসব গাছের নিচে চাষ করেছেন চাষিরা। আগে দেশের কিছু জায়গায় মাটিতে চাষ হলেও এখন আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করছেন অনেকেই। আদা একটি নিত্য প্রয়োজনীয় মসলা। বাসাবাড়ির ছাদেও চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় বীজ, বস্তা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। বস্তা প্রতি ৮‘শ গ্রাম থেকে ১ কেজি করে ফলন হচ্ছে। পতিত জমি, আম বাগান, বাড়ির ছাদে, আদা চাষাবাদ করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
What's Your Reaction?