চারণকবি বিজয় সরকারের ১২২তম জন্মবার্ষিকী
ফরহাদ খান, নড়াইল
একুশে পদকপ্রাপ্ত চারণকবি বিজয় সরকারের ১২২তম জন্মবার্ষিকী ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদরের নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। বাবা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। বিজয় সরকার নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন, মতান্তরে মেট্রিক পর্যন্ত। তার দুই স্ত্রী বীণাপানি ও প্রমোদা অধিকারীর কেউ বেঁচে নেই। বিজয় সরকারের দুই ছেলে কাজল ও বাদল অধিকারী ভারতে বসবাস করেন।
বিজয় সরকার একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। মুক্তিযুদ্ধের গানসহ ১৮‘শরও বেশি গান লিখেছেন তিনি। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। ‘পাগল বিজয়’ হিসেবে সমধিক পরিচিত তিনি।
বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের হাওড়ার বেলুডে পরলোকগমন করেন। পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়।
তার গানের কথা ও সুরের মাঝে বিজয় সরকার আজো বেঁচে আছেন হাজারো মানুষের হৃদয়ে।
বিজয় সরকার লিখেছেন, ‘যেমন আছে এই পৃথিবী/তেমনিই ঠিক রবে/সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে...।’ মায়ার বাঁধন ছেড়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়ায় এই চিরন্তন উপলদ্ধি আজো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘তুমি জানো নারে প্রিয়/তুমি মোর জীবনের সাধনা’সহ অসংখ্য গান।
আধ্যত্মিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিজয় সরকার গেয়েছেন, ‘নবী নামের নৌকা গড়/আল্লাহ নামের পাল খাটাও/বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন/কূলের তরী খুলে দাও...।’ কিংবা ‘আল্লাহ রসূল বল মোমিন/আল্লাহ রসূল বল/এবার দূরে ফেলে মায়ার বোঝা/সোজা পথে চল...।’
স্ত্রী বীনাপাণির মৃত্যুর খবরে গানের আসরেই গেয়েছেন, ‘পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ওরে একদিন ভাবি নাই মনে/সে আমারে ভুলবে কেমনে...।’
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন এর ‘নক্সী কাথার মাঠ’ কাব্যগ্রন্থের নায়ক-নায়িকা ‘রূপাই’ ও ‘সাজু’র প্রেমকাহিনী নিয়ে বিজয় সরকার গেয়েছেন, ‘নক্সী কাঁথার মাঠেরে/ সাজুর ব্যাথায় আজো রে/বাজে রূপাই মিয়ার বাঁশের বাঁশি...।’ ‘কী সাপে কামড়াইলো আমারে/ওরে ও সাপুড়িয়ারে/আ...জ্বলিয়া পুড়িয়া মলেম বিষে...।’
বিজয় সরকারের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জন্মভূমি নড়াইল সদরের ডুমদি গ্রামে দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিজয় সরকার জন্মজয়ন্তী উৎসব উদযাপন কমিটি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোচনা সভা, বিজয় গীতি পরিবেশন এবং ভাব ও কবিগানের আসর। কবিগান পরিবেশনা করবেন পিরোজপুরের প্রভাষ সরকার ও সন্তোষ সরকার।
বিজয় সরকার জন্মজয়ন্তী উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সুলতান মাহমুদ জানান, দু’দিনব্যাপী জন্মজয়ন্তী উৎসব সুষ্ঠুভাবে পালনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
What's Your Reaction?