বেগুনি রঙের ‘দুলালী সুন্দরী’ চাষ করে ভাইরাল কৃষক রবিউল

মুসা মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
কৃষি প্রধান বাংলাদেশে প্রধান অর্থকরী ফসল ধান। আউশ, আমন ও বোর মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ধানের চাষাবাদ হয়। কখনো কৃষি অধিদপ্তরের মাধ্যমে বা কখনো চাষীর উদ্ভাবিত ধান চাষ করে থাকেন। দেশের বরেন্দ্র অঞ্চল, হাওড়, বাওড়, খাল, বিল, নদীর তীরে লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষ হয় ধান। এমনই এক বেগুনি রঙের ধান চাষ করে আলোচনায় এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার পিড়াশন এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম।
তার চাষ করা ধানের নাম ‘দুলালী সুন্দরী’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এই ধানের ফলন ভালো হলে আগামীতে চাষিদের চাষাবাদ করার জন্য উৎসাহিত করা হবে।
রবিউল ইসলামের ‘দুলালী সুন্দরী’ ধানের ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় চারপাশে সবুজ ধানের সমারোহ। মাঝখানে বেগুনি রঙের পাতার ধানক্ষেত। যে কেউ প্রথম দেখায় ধান ভাবতে অবাক হবেন। রাস্তায় যাওয়া পথচারীরা চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ধান ক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের ধান গাছ দেখে অবাক হচ্ছেন। কেউ কেউ কাছে এসে নাড়াচাড়া করে দেখছেন। ছবিও তুলছেন অনেকে।
রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে জানান, ইউটিউবে দেখে গাইবান্ধা থেকে বীজ নিয়ে এসে শখ করে ১২ কাঠা জমিতে বেগুনি রঙের ‘দুলালি সুন্দরী’ ধানের চাষ করেছেন তিনি।
এ অঞ্চলে এই ধান প্রথম আবাদের ফলে ইতিমধ্যে স্থানীয়দের মাঝে কৌতুহল তৈরী হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকসহ দর্শনার্থীরা প্রায় প্রতিদিন তার ক্ষেতে ভিড় করছেন বেগুনি রঙের ধান দেখার জন্য।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এ ধানে যদি ফলন ভালো হয় এবং বাজার মূল্য বেশি হয় তাহলে আগামীতে তারাও এ ধানের চাষ করবেন। যদি ফলন আশানুরূপ হয় তবে কৃষকদের মাঝে এই জাতের ধান ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানান রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, ইউটিউব দেখে জেনেছি, দেশে সর্বপ্রথম এ জাতের ধানের আবাদ শুরু হয়েছিল গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ধান। ধানের গায়ের রং সোনালি ও চালের রং বেগুনি হয়। উফশী জাতের এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটাই কম হয়। রোপণ থেকে ধান পাকতে সময় লাগে ১৪৫-১৫৫ দিন। অন্য জাতের ধানের চেয়ে এ ধানের গোছা প্রতি কুশির পরিমাণ বেশি থাকায় একরপ্রতি ফলনও বেশ ভালো হয়ে থাকে। অন্য সব ধানের তুলনায় এ ধান মোটা, তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু। তবে কাটা মাড়াই পর বলতে পারবো ফলন কেমন হবে।
রবিউল ইসলাম জানান, চারপাশে সবুজ ধানের মাঝে বেগুনি এ ধানক্ষেতটি প্রথম দেখায় দৃষ্টি কাড়ছে সবার। সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাজানি হওয়ার কারণে ধান ক্ষেত দেখতে দূরদূরান্ত থেকে কৃষক ও দর্শনার্থীরা আসছেন। সবাই এ ধান সম্পর্কে জানাতে চাইছেন। এজন্য জমিতে ব্যানার টানিয়েছি। ব্যানারে নাম দিয়েছি দুলালী সুন্দরী।
রবিউল ইসলামের ধানের জমিতে অবস্থানের সময় কয়েকজন পথচারী সঙ্গে কথা হয়। তারা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বেগুনি রঙের ধান দেখে ছবি তুলতে এবং ধান সম্পর্কে জানার আগ্রহে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
চৌডালা এলাকার সুমন আলী বলেন, ফেসবুকে দেখেছি এই ধান চাষাবাদ বিষয়ে। আজকে এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই দেখার জন্য দাঁড়িয়েছি। শুনছি এই ধানে নাকি অনেক পুষ্টি গুণ রয়েছে এবং ফলন ভালো হয়৷ আবার দাম ভালো পাওয়া যায়। এমনটা যদি হয় তাহলে আগামীতে চাষ করার জন্য উদ্যোগী হব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চলতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ৪৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, জেলায় বেগুনি জাতের এ ধান প্রথম চাষ করেছেন একজন কৃষক । ফলে কৃষকদের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। ধান কাটার পর এর ফলন জানা যাবে। এ ধানের পুষ্টিগুণ যাচাই করে যদি ভালো হয়, তাহলে আগামীতে কৃষকদের মধ্যে এর বিস্তার ঘটানো হবে।
What's Your Reaction?






