ইবিতে শিক্ষক নিয়োগে বিতর্ক: অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ

Nov 3, 2025 - 01:33
 0  8
ইবিতে শিক্ষক নিয়োগে বিতর্ক: অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

কুষ্টিয়া, ০২ নভেম্বর (ইবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) - কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর হেদায়েতুল্লাহ নামের এক পরীক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছেন।

শুক্রবার পোস্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

হেদায়েতুল্লাহ জানিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখ ছিল ৩০ অক্টোবর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হঠাৎ জানায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৯ অক্টোবর। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা পেছানো হয়, তবে এখানে তা এগিয়ে আনার কারণে প্রার্থীরা বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

পরীক্ষার বিষয়বস্তু নিয়েও অভিযোগ করেছেন তিনি। ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইইআর)-এর সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ পরীক্ষার সব প্রশ্ন সম্পূর্ণ আরবিতে নেওয়া হয়েছে। অথচ গবেষণা, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, পেডাগোজি বা ইনস্টিটিউটের বিএড ও এমএড কোর্স সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন রাখা হয়নি। বরং প্রশ্ন এসেছে আরবি ব্যাকরণ, অলংকার শাস্ত্র, হেদায়া কিতাব ও ইসলামী ব্যাংকিং থেকে।

হেদায়েতুল্লাহ আরও লিখেছেন, “যাকে নিয়োগ দিতে চাওয়া হচ্ছে, তাকে আগেই ঠিক করে রেখেছেন। তিনি হয়তো শ্বশুরের মাধ্যমে প্রভাবশালী, আরবিতে দক্ষ। তাই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন তার সুবিধামতো সাজানো হয়েছে।

হেদায়েতুল্লাহ আরও অভিযোগ করেছেন, ভাইভা বোর্ডে অনেক প্রার্থীকে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয়েছে। অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন যেমন তাফসির কাশশাফের আলোকে সূরা মাউনের তাফসির মুখস্থ বলুনপ্রার্থীদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করেছে।

ফেসবুক পোস্টে বিভিন্ন শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ড. মিজান মন্তব্য করেছেন, “প্রতারণার নতুন কৌশললিখিত পরীক্ষা। শিক্ষক নিয়োগ হবে ইসলামী শিক্ষা বিভাগের, অথচ আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের এক্সপার্ট আনা হয়েছে। দেশে ইসলামী শিক্ষা বিভাগের যোগ্য প্রফেসররা কি নেই?”

বসির উল্লাহ লিখেছেন, “গোপন রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ধন্যবাদ। একসময়ের ভিসির পুত্র কোটা, কন্যা কোটা, নাতিনজামাই কোটাএখনো চলছে সেই প্রথা। দেশের অবস্থা এভাবে চলবে কোথায়? আপনি পাবলিকলি অভিযোগ করেছেন, ইবি কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ খণ্ডন করুক।

কামরুজ্জামান মন্তব্য করেছেন, “কিছুই পরিবর্তন হয়নি, হবেও না। একদল আগে নিজেদের লোক নিয়েছে, এখন যারা আছে তারাও নিজেদের লোক নিচ্ছে।

সৈয়দ মোস্তফা লিখেছেন, “আইআইইআর-এর দাওয়াহ বিভাগের এক শিক্ষক আ জ ম তরিকুলের মেয়ের জামাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইন-শা-আল্লাহ তার মেয়ে আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে, ছেলে আল কুরআন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবে। এভাবেই পারিবারিক পুনর্বাসন চলছে। ইবির প্রশাসন স্বচ্ছতার নামে জালিয়াতি করেছে।

আতাউল্লাহ বোখারী লিখেছেন, “যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার নাম আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার শ্বশুর আ জ ম তরিকুল ইসলাম, যিনি ইবির দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও জামায়াত নেতা। বাকিটা আপনি বুঝে নিন।

হেদায়েতুল্লাহ পোস্টের শেষে লিখেছেন, “মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও ভণ্ডামি না করলেই ভালো হয়। শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানকে এমন তামাশার খেলা করে জাতিকে বিভ্রান্ত করা উচিত নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা জগতে এই ঘটনা এক বিতর্কিত অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে, যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজে স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও মেধা-ভিত্তিক মূল্যায়নের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online