মাছের আড়ত থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা আদায়, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

Oct 11, 2025 - 11:40
 0  6
মাছের আড়ত থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা আদায়, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

নড়াইল, ১০ অক্টোবর (জেলা প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস)নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদরের আলামুন্সির মোড় এলাকায় মাছের আড়ত থেকে নিয়মবর্হিভুত ২০ লক্ষাধিক টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় আতঙ্কে আছেন আড়তের ব্যবসায়ীসহ ক্রেতা-বিক্রেতারা। অভিযোগ রয়েছে, লোহাগড়া পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর মিলু শরীফ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মবর্হিভুতভাবে ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

মায়ের ভান্ডার মৎস্য আড়তের স্বত্ত্বাধিকারী ফারুক শেখ বলেন, পহেলা বৈশাখের পর থেকে মিলু শরীফ লোক পাঠিয়ে আমাদের কাছে খাজনা দাবি করেন। আমরা বলেছি, ব্যক্তিগত মালিকানায় আমরা কেন খাজনা দিব? তারা ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র দেখাতে বললেও তা দেখাতে পারেননি।

একতা মৎস্য আড়তের রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস রবিন বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে এখানে আমরা ব্যবসা করছি। এতোদিন খাজনা দেয়া লাগেনি। এখন আমরা যন্ত্রণায় আছি। আমাদের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে এ বছর টাকা নেয়া হয়েছে। বিকাশ ও সঞ্জয় পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মিলু শরীফকে এই টাকা দিয়েছে। তারা বলেছে, টাকা না দিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। সাংবাদিকদের কাছে বললে পরিণাম ভালো হবে না বলেও হুমকি দিয়েছেন তারা।

সুবল কুমার বিশ্বাস বলেন, ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা মৎস্য আড়তটি আমাদের ভাড়া নেয়া। পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স, কৃষিবিপণী লাইসেন্স, ডিসি লাইসেন্স ও ইনকাম ট্যাক্সের ফাইল আছে। ব্যবসা করার জন্য সরকারের যতসব কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন আমাদের তা আছে। এখানে তিন বছর ধরে মাছ বিক্রি করছি। কোন খাজনা দেয়া লাগেনি। কিন্তু হঠাৎ করে মিলু শরীফসহ লোকজন এসে খাজনা দাবি করেছেন। তাদের কথা, হয় খাজনা দিতে হবে; না হয় ব্যবসা ছেড়ে চলে যেতে হবে।

এছাড়া আরো অনেক ব্যবসায়ী জানান, ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা এই মাছ আড়তে তারা প্রায় তিনবছর ধরে মাছ বেচাকেনা করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে সকাল ৯টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। বিগত বছরগুলোতে এ মাছের আড়ত থেকে খাজনা বা ইজারা বাবদ কোন টাকা নেয়া হয়নি। অথচ এ বছর হঠাৎ করে ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যবসায়ীদের দিতে হয়েছে।

এখানে সাতজন আড়তদার আছেন। তাদের সাথে শতাধিক মৎস্যচাষী ও সাধারণ জেলে মাছ কেনাবেচায় জড়িত আছেন। রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাস, শোল, টাকি, শিং, কৈ, পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ও চাষযোগ্য মাছ এই আড়তে বেচাকেনা হয়। হঠাৎ করে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা লোহাগড়ার বৃহত্তম এই মাছের আড়তে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আড়তদারসহ সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতা আতঙ্কে আছেন। ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা এই আড়তে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা হয়।

আড়তদাররা আরো বলেন, এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনে ট্রাকসহ অন্য যানবাহনে ঢাকা ছাড়াও দেশের প্রান্তে নিয়ে যান। মাছের আড়তটি নড়াইল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড়। এটিকে কেন্দ্র করে অন্তত এক হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করে ২০ লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজি হওয়ায় আমরা আতঙ্কে আছি। এই চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে ঐহিত্যবাহী মাছের আড়তটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে অনেক লোক বেকার হবে। অন্যত্র এমন একটি মাছের আতড় গড়ে ওঠা সম্ভব হবে না। আড়তটি বন্ধ হলে ঘেরমালিক এবং বিলে মাছ বিক্রেতারা বেশি ক্ষতির শিকার হবেন। আড়তটি সুন্দর পরিবেশে নড়াইল-লোহাগড়া-ঢাকা-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের পাশে হওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ভিড় করেন।

ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, আমরা লোহাগড়া পৌরসভার হাটবাজার ইজারার কাগজপত্র দেখেছি। মাছের আড়তটি ইজারার বাইরে। কারণ, ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠে মাছের আড়ত কখনো পৌরসভার ইজারার মধ্যে আসতে পারে না।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত লোহাগড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও লোহাগড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মিলু শরীফ দাবি করে বলেন, প্রতিবছর চৈত্র মাসে হাট-বাজার টেন্ডার হয়। অনেকেই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে আমার চাচাতো ভাই লোহাগড়া বাজার সংলগ্ন মাছ ও মাংস আড়ত পেয়েছেন। এরপর মাছ আড়তের ব্যবসায়ীরা এসে আমাকে বলেন, আপনার চাচাতো ভাই টেন্ডার পেয়েছেন। প্রতিদিন খাজনা না তুলে আমরা আড়তদাররা মিলে পৌরসভায় পুরো টাকাটা দিয়ে দিব। এরপর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। এ ঘটনার ১৫ দিন পর চাচাতো ভাই মারা যান। আড়তদার সঞ্জয়, বিকাশ, কৃষ্ণ ও সাহাদাত সিকদার মিলে ওই টাকাটা আমার মাধ্যমে দিয়েছেন। আমি শুধু সমন্বয় করেছি। আমি কিনিনি, বিক্রি করিনি, কারোর কাছ থেকে চান্দা এবং খাজনাও তুলিনি। আমি তিনবার পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলাম। পৌর বিএনপির সভাপতি। তাই কিছু কুচক্রীমহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এখান থেকে ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ইজারা আদায় হয়েছে। সরকারি টাকা, এক টাকাও ফাঁকি দেয়া যাবে না।

এ ব্যাপারে লোহাগড়া পৌরসভার প্রশাসক মিঠুন মৈত্র বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি হাটবাজার ইজারার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পৌরসভার আওতায় সাতটি হাটবাজার ইজারা দিয়েছি। এই সাতটি হাট নতুন করে সৃষ্টি হয়নি। আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত।

ব্যক্তিমালিকানায় ইজারা দেয়া যায় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে পৌর প্রশাসক মিঠুন মৈত্র বলেন, ব্যক্তিগত জায়গায় ইজারা দেয়ার সুযোগ নেই। সাতটি বাজারের ইজারার সার্বিক বিষয় উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এর বাইরে আমাদের কোন ইজারা নেই। আলামুন্সির মোড়ের আড়ত থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজির বিষয়ে বলেন, কে কোথা থেকে টাকা তোলেন; বিষয়টি বোঝা মুকিল। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online