বাকৃবির স্বয়ংক্রিয় মেশিনে আলু বাছাইয়ে কমবে অপচয়

Mar 3, 2024 - 15:43
 0  131
বাকৃবির স্বয়ংক্রিয় মেশিনে আলু বাছাইয়ে কমবে অপচয়
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

ময়মনসিংহ, ০২ মার্চ (বাকৃবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) বিশ্বে সর্বোচ্চ আলু উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রতি বছরই চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হয়। কিন্তু এর বড় একটি অংশ যথাযথ সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের অভাবে হয় অপচয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

এমতাবস্থায় আলু বাছাইকরণ এবং সংরক্ষণের সমস্যা নিরসনে কাজ করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। গবেষণার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো উদ্ভাবন করেছেন স্বয়ংক্রিয় আলু বাছাই করার যন্ত্র (অটোমেটেড রিয়েল টাইম পটেটো গ্রেডিং মেশিন)। উদ্ভাবিত এই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি আলুর আকার, রং ও ত্রুটি নির্ণয় করে প্রতি ঘন্টায় এটি ৩০ থেকে ৩৫ কেজি আলু বাছাই করতে পারে। এতে আলুর উত্তলন পরবর্তী ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। উদ্ভাবিত যন্ত্র সম্পর্কে এসকল তথ্য জানান যন্ত্র উদ্ভাবন গবেষণার প্রধান গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান।

ড. আনিসুর রহমান জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন ছিল ১১ মিলিয়ন টনেরও বেশি। সেই সময় অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিলো ৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন। সে অনুযায়ী আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা ছিলো প্রায় ৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন। কিন্তু যথাযথ প্রযুক্তির অভাবে দেশের কৃষকেরা হাত ও চোখের আন্দাজেই আলু বাছাই এবং সংগ্রহ করায় আলু সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। এর ফলে বাজারে দেখা যায় আলুর সংকট, ভরা মৌসুমেও থাকে চড়া দাম। উৎপাদিত আলু সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়বে না। বিষয়টি মাথায় রেখেই যন্ত্রটি উদ্ভাবন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার করে যত নিখুঁতভাবে ত্রুটি সনাক্ত করা যায়, খালি চোখে তা সম্ভব হয় না। কিন্তু মাঠ থেকে আলু তোলার পর সেগুলো সংরক্ষণের জন্য সঠিকভাবে আকার, রং ও ত্রুটি অনুযায়ী বাছাই করা না হলে তাতে ক্ষতির আশংকা থাকে। কেননা রোগাক্রান্ত আলুগুলো সংরক্ষিত অন্যান্য আলুর সাথে থেকে সেগুলোকেও নষ্ট করে দেয়। উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় সরবরাহকৃত প্রতিটি আলুর ছবি নিবে এবং তা প্রক্রিয়াকরণ করে আলুর রং, আকার ও রোগাক্রান্ত অংশ শনাক্তকরণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবে। গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোটরের মাধ্যমে আলু স্থানান্তর করা হবে। ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের আলু বাছাইয়ে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটির সফলতার হার প্রায় ৮৬ শতাংশ। যন্ত্রটির অধিকতর উন্নয়ন হিসেবে প্রতি ঘন্টায় আরও বেশি পরিমাণে আলু বাছাই করা এবং যন্ত্রের সফলতার হার আরো কয়েক গুণে বৃদ্ধি করা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) এর অর্থায়নে 'মেশিন ভিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলুর জন্য স্বয়ংক্রিয় বাছাই পদ্ধতি' - শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যন্ত্রটির গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। ১ লাখ ২০ হাজার টাকার দুইবছর মেয়াদী ওই গবেষণা প্রকল্পের মেয়াদকাল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। যন্ত্র উদ্ভাবনের গবেষণাপত্রটি স্মার্ট এগ্রিকালচার টেকনোলজিনামক বৈজ্ঞানিক জার্নালে জমা দেওয়া হয়েছে এবং তা প্রাথমিকভাবে প্রকাশনার জন্য নির্বাচিত হয়েছে বলেও জানান ড. আনিসুর রহমান।

গবেষণা কাজের সাথে সম্পৃক্ত কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটিতে রয়েছে মোটরচালিত ৭ ফুট দীর্ঘ ও দেড় ফুট প্রস্থের কনভেয়ার বেইল্ট (আলু পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত বেইল্ট), ছবি তোলা ও বিশ্লেষণের জন্য কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ক্যামেরা। এছাড়াও রয়েছে এলইডি লাইটিং সিস্টেম এবং বাছাইকৃত আলুকে সুনির্ধারিত স্থানে রাখতে সার্ভো মোটর ও মাইক্রোকন্ট্রোলারের সমন্বয়ে নিক্ষেপ পদ্ধতি। যন্ত্রটিতে ছবি বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ম্যাটল্যাব (একটি উন্নত প্রোগ্রামিং ভাষা), যা খুবই অল্প সময়ে আলুর আকার নির্ধারণ এবং পূর্ব নির্ধারিত আলুর আকারের সাথে তুলনা করে সিদ্ধান্ত দিতে পারে। যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিন আকারের আলু বাছাই করতে পারে। কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় খালি চোখে দৃষ্টিগোচর না হওয়া সব ত্রুটিও ধরা পড়ে যন্ত্রটিতে। ফলে যথাযথভাবে কম সময় ও পরিশ্রমে আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। আর উৎপাদিত অতিরিক্ত আলু সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে কৃষকেরা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online