“১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও মানুষ স্বাধীনতা পায়নি“
মুসা মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও মানুষ স্বাধীনতা পায়নি উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সেজন্যই মানুষকে স্বাধীনদেশেও বারবার আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। তবে এই স্বাধীনতার চূড়ান্ত সুফল আসবে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে।
রবিবার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জাতীয় সংসদ এমন এক জায়গা সেখানে যে আইন দিবেন, সেই আইনই চালু হবে। জাতীয় সংসদ ধর্ম নিরপেক্ষতার আইন দিয়ে চলেছে, জাতীয়তাবাদ দিয়ে চলেছে, মানুষের তৈরি মতবাদে চলেছে। এসবের পরও কি দেশের মানুষ শান্তি বা অধিকার পেয়েছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মানুষের তৈরি আইনে সমাজ বা রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না এবং হবেও না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর আইনে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা সংসদ চলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জাহান্নাম থেকে বেঁচে জান্নাতে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। কাজ সৃষ্টির জন্য শ্রমিক দরকার। শ্রমিক ছাড়া দেশ, রাষ্ট্র, জেলা, উপজেলা সকল কিছুই অচল। ছাত্র আন্দোলনের এই বিপ্লবের পাশাপাশি আমাদের আরেকটি বিপ্লবের জন্য লড়তে হবে সেটা হলো ইসলাম কায়েমের জন্য। যারা কুরআনের বিধানকে মানতে চায় না তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখান করবে।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শ্রমিক সভ্যতা বিনির্মাণের হাতিয়ার এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চালিকাশক্তি, শ্রমিকদের শরীরে ঘাম, রক্ত এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে সভ্যতা গড়ে উঠেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর নাম শ্রমিক। যে সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে তারা শ্রমিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলেছে। শুধু ছিনিমিনি খেলেনি, শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে তারা সংঘাত সৃষ্টি করেছে। তারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য দাবার গুটি হিসেবে শ্রমিকদের ব্যবহার করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের জন্য শ্রমিক ইনষ্টিটিউট গড়ে তুলবো। প্রয়োজন হলে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে বসবো। শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল আরো বলেন, মানুষের তৈরি আইনে শ্রমিক শোষণ মুক্ত হবে না। শ্রমিক শোষণ মুক্তির জন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শ্রমিক-মালিকের কোন বৈষম্য থাকবে না। সকলেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান মর্যাদা ও অধিকার ভোগ করবে। তাই নতুন বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে তিনি শ্রমিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মুনিমুল হকের সঞ্চালনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান ভুইঁয়া। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম, মো: নজরুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগরের প্রধান উপদেষ্টা ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা আবুজার গিফারী, রাজশাহী অঞ্চলের সহকারি পরিচালক মাও. আব্দুস সবুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি অধ্যাপক লতিফুর রহমান, সদর উপজেলা সভাপতি ফরহাদ আহমেদ সায়িম, পৌরসভা সভাপতি মো. এনায়েতুল্লাহ সহ নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং সমাজের উন্নয়নে তাদের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও সম্মেলনে শ্রমিকদের জন্য একটি সুন্দর, ন্যায্য এবং সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
What's Your Reaction?