গরু বিক্রির পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে বিপাকে কৃষক!

Jan 15, 2025 - 03:17
 0  5
গরু বিক্রির পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে বিপাকে কৃষক!
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

ফরহাদ খান, নড়াইল
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরবালিদিয়া গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক কাবির মুসল্লি (৭৫) গরু বিক্রির পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

কোরবানির ঈদে ৯৫ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় কেনেন চরবালিদিয়া গ্রামের জামাই ফরিদপুরের গরু ব্যবসায়ী লাবলু মোল্যা। ষাঁড়টি কেনার সময় গরুর মালিককে মাত্র ১০ হাজার টাকা দেন লাবলু। বাকি ৮৫ হাজার টাকা পরিশোধে আজকাল করতে থাকেন তিনি (লাবলু)।  
ভুক্তভোগীসহ গ্রামবাসী জানান, দীর্ঘদিনেও গরু ব্যবসায়ী লাবলু কৃষক কাবির মুসল্লিকে টাকা পরিশোধ না করায় দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি (কাবির)। টাকা আদায়ে কাবিরসহ তার পরিবারের সদস্যরা অনেকবার ফরিদপুরে যান। এ খবর পেয়ে সটকে পড়েন লাবলু মোল্যা। এরপর ১০ ডিসেম্বর গরু ব্যবসায়ী লাবলু মোল্যা হঠাৎ করে মাইজপাড়া হাটে গরু কিনতে আসার পথিমধ্যে কালিনগর এলাকা থেকে কাবির মুসল্লির পরিবার তাকে (লাবলু) আটকে রেখে টাকার জন্য চাপ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনরা দাবি করেন, লাবলুকে শিকল বেঁধে কাবির মুসল্লির বাড়িতে আটকে রাখা হয়। এছাড়া লাবলুর কাছে থাকা ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।  
ফরিদ মোল্যাসহ গ্রামবাসীর অনেকে জানান, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গরু ব্যবসায়ী লাবলু মোল্যা নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরবালিদিয়া গ্রামের কাবির মুসল্লির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, তা ঠিক নয়। তাকে অপহরণ করা হয়নি। তার কাছ থেকে কোন টাকাও ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেনি। বরং দীর্ঘদিন গরু বিক্রির ৮৫ হাজার টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন কাবির মুসল্লি। দুইবার স্ট্রোক করেছেন তিনি।  
গরু বিক্রেতা কাবির মুসল্লি বলেন, গত কোরবানির ঈদে লাবলুর কাছে গরু বিক্রি করেছি। অনেকবার টাকা চাওয়ার পর দেয়নি। আমি গরিব মানুষ। গরু পালন এবং কৃষি কাজ করে সংসার চালায়। আমার এক মেয়ে প্রতিবন্ধী। অনেক কষ্টের সংসার। তবুও গরু বিক্রির ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে কত টালবাহানা করা হয়েছে আমাদের সঙ্গে। পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি।  
চরবালিদিয়া গ্রামের রাজু মুন্সি বলেন, গরু বিক্রির টাকা নিয়ে লাবলুর শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। পাওনা টাকা আদায়ে লাবলুকে আটকানো হলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরামর্শ দেন, তাকে (লাবলু) বেঁধে রাখার জন্য। এরপর নলদী পুলিশ ফাঁড়িকে জানানো হলে ফাঁড়ি ইনচার্জ মুরসালিন বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের পরামর্শ দেন। পরে শনিবার সকালে লাবলু মোল্যাকে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।
এদিকে, ঘটনার দিন শুক্রবার ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, গরু ব্যবসায়ী লাবলুকে আটকানো পর তিনি জানান, তার কাছে কোন টাকা-পয়সা নেই। এছাড়া দীর্ঘদিনেও গরু কেনার ৮৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে পারেননি বলে স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে লাবলুসহ তার পরিবার-পরিজন অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে কাবির মুসল্লির লোকজন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। ভিডিওচিত্রের সঙ্গে তাদের অভিযোগের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ মিথ্যাচারের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী কাবির মুসল্লিসহ গ্রামবাসী।
লোহাগড়া থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, গরু ব্যবসায়ী লাবলু মোল্যাকে কাবির মুসল্লির বাড়িতে আটকে রেখে টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন তার পরিবার। অন্যদিকে, কাবির মুসল্লি দীর্ঘদিনেও গরু বিক্রির ৮৫ হাজার টাকা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। দুইপক্ষের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online