বাকৃবির হলে আবারও মানসিক নির্যাতন ও হুমকির অভিযোগ

ময়মনসিংহ, ১৪ মে (বাকৃবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) – বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাওলানা ভাসানী হলে আবারও গেস্টরুম চালুর অভিযোগ উঠেছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে হলগুলো থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করার পর দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল র্যাগিংয়ের এই সংস্কৃতি। তবে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে আবাসিক হলগুলোতে নবীন শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের পুরোনো ‘গেস্টরুম কালচার’ আবারও ফিরে এসেছে বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ফেসবুক পোস্ট ও একটি অডিও ক্লিপে দাবি করা হয়েছে, বাকৃবির মাওলানা ভাসানী হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়মিতভাবে গেস্টরুমে ডেকে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।
ফেসবুক পোস্টে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়, 'প্রায় প্রতিদিন রাতে আমাদের গেস্টরুমে ডাকা হয়। সেখানে মানসিক চাপ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বর্ষের দশজন সিনিয়র ভাই গেষ্টরুমে কথা বলতেন। তারা দাম্ভিকতার সুরে বলতেন, “প্রশাসনও আমাদের কিছু করতে পারবে না।” যদি কেউ গেস্টরুমের খবর বাইরে দেয়, তাকে হত্যা করব বলেও হুমকি দেওয়া হয়। আরও বলা হয়, যদি আমাদের কথা না মানো, তাহলে হল থেকে বের করে দেওয়া হবে।'
ভাইরাল হওয়া সেই অডিও ক্লিপে শোনা যায়, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ‘ভুলত্রুটি’ ধরিয়ে দিচ্ছেন এবং ‘আদব-কায়দা শেখানোর’ নামে বকাঝকা করছেন।
তবে হলের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, উক্ত অডিওটি কয়েক মাস আগের, যখন হলে আন্তঃহল ইনডোর গেমস টুর্নামেন্ট চলছিল। সে সময় টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের খেলার সমর্থনে মাঠে উপস্থিত থাকার জন্য ডাকা হয়েছিল। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে আন্তঃহল ভলিবল খেলায় অংশ নেওয়ার পর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঠে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল এবং সে উপলক্ষে আবারও তাদের গেস্টরুমে ডাকা হয়েছিল।
সত্যতা যাচাইয়ে হলে প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা হলে তারা জানান, প্রচলিত অর্থে নিয়মিত গেস্টরুম না হলেও কয়েকদিন ডাকার ফলে আমরা কিছুটা মানসিক চাপ অনুভব করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমাদের গেস্টরুমে ডাকা হলেও পূর্বের প্রচলিত ধারার মতো সেরকমভাবে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। টুর্নামেন্ট বা বিভিন্ন ইভেন্টের আগে সিনিয়র ভাইয়েরা কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে ডাকতেন।'
ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, '২৮ এপ্রিলের আগে টানা চার-পাঁচ দিন তাদের ডাকা হয়েছিল যাতে আমাদের হলে শুরু হওয়া ফুটবল টুর্নামেন্টের সফল আয়োজন নিশ্চিত করা যায়।'
তবে ওই হলের ১ম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, 'রাত ৯টা বা ১০টার দিকে ডাকা হতো এবং সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট কথা চলত। শারীরিক নির্যাতন না হলেও কারও দোষত্রুটি থাকলে সামনে এনে বকাঝকা করা হতো। বিষয়টি আমাদের কিছুটা বিরক্তিকর লেগেছে এবং মানসিকভাবে চাপ অনুভব করেছি।'
এই বিষয়ে ওই হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শরীফ-আর-রাফি বলেন, র্যাগিংয়ের প্রতি আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে গেষ্টরুম হয়েছে মর্মে আমি জানতে পারি। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি আমার হলে টুর্নামেন্ট চলছিল যার ফলে টিম মিটিং, ভলেন্টিয়ার্স মিটিংয়ের কারণে কিছু ছাত্র গেস্টরুমে বসেছিল। সম্প্রতি আমরা একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি যে গেস্টরুম সবসময় তালাবদ্ধ থাকবে এবং চাবিটি থাকবে নিরাপত্তারক্ষীর কাছে। কেউ গেস্টরুম ব্যবহার করতে চাইলে খাতায় নাম লিখে অনুমতি নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গেস্টরুমের অপব্যবহার বা অনাকাঙ্ক্ষিত ‘গেস্টরুম কালচার’ ঠেকাতে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। যদি কারো কাছে কোন তথ্য বা প্রমাণ থাকে, দয়া করে আমাকে জানাবেন। আমার অগোচরে কিছু ঘটে থাকলেও তথ্যপ্রমাণ পেলে আমি অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমি যে কোন অভিযোগ পেলে তা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখি। কোন অপরাধ যেন ঘটতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। অপরাধ সংগঠনের আগে তা প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে জরুরি।
What's Your Reaction?






