আর বাতিল নয়, এবার কম্বাইন্ড ডিগ্রি চান পশুপালনের শিক্ষার্থীরা

ময়মনসিংহ, ২৯ জুলাই (বাকৃবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) – প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভেটেরিনারি ও পশুপালন দুইটি আলাদা অনুষদ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুষদ দুটি থেকে যথাক্রমে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ও বিএসসি ইন অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি পৃথক ডিগ্রি প্রদান করে আসছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্বাইন্ড (বিএসসি ইন ভেট সাইন্স এন্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি) ডিগ্রি চালু হয়েছে। তবে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদ কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি জানালেও পশুপালন অনুষদের অনাগ্রহে বাকৃবিতে তা সম্ভব হয়নি। এমনকি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাতিল চেয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনও করেছেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। তবে এবার নিজেরাই কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন করছেন ওই অনুষদের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
প্রাণিসম্পদ খাতের সমতা ও কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে বাকৃবিতে টানা দুই দিন বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এরপর মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পশুপালন অনুষদের ডিন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় উপাচার্যের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জি. এম. মুজিবর রহমান।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা প্রাণি চিকিৎসা ও প্রাণি উৎপাদন, দুই ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কম্বাইন্ড (বিএসসি ইন ভেট সাইন্স এন্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি) ডিগ্রি চালুর দাবি জানান।
স্মারক লিপিতে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, দেশে বর্তমানে ভেটেরিনারি সায়েন্স ও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রিকে একীভূত করে কম্বাইন্ড ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে একটি মাত্র ডিগ্রিতে প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় গ্র্যাজুয়েটরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সবধরনের পদের জন্য আবেদন করতে পারছেন। অথচ বাকৃবিতে এখনও দুটি অনুষদ পৃথকভাবে থাকায় অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অবহেলিত হচ্ছে।
এসময় শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপিতে বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি, ডেইরি, নিউট্রিশন ও জেনেটিক্স ডিপার্টমেন্টের লেকচারার পদে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি বাদ দিয়ে ডিভিএম ও কম্বাইন্ডদের উল্লেখ করে সার্কুলার দেয়া হচ্ছে। অথচ উপরোক্ত বিষয়গুলো অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রির জন্য আবশ্যকীয়। এমনকি ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইনেও ভেটেরিনারির সংজ্ঞাতে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় প্রবেশ করিয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মপরিধি একদম সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা শিক্ষা নিচ্ছি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর, অথচ বাস্তবে আমাদের কোন স্বীকৃতি নেই। এজন্য আমাদের সিনিয়ররাও চরম হতাশা ও পেশাগত অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন ২০১৯ অনুযায়ী কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের প্র্যাকটিসের স্বীকৃতি থাকলেও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের ক্ষেত্র একেবারেই সংকুচিত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বেসরকারি খাতেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র ডিভিএম বা কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ মানবসম্পদ নিশ্চিত করতে হলে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি সায়েন্সের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করা সময়ের দাবি। পাশাপাশি অতীতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাতিল চেয়ে করা আন্দোলনগুলো ভুল ও দূরদৃষ্টির অভাব বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
স্মারক লিপি গ্রহণের বিষয়ে পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করেছি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট যে আমাদের অনুষদটা ৬৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং ফ্যাকাল্টিটা কম্বাইন্ড করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকরা একমত না। উপাচার্য স্যার বিদেশ থেকে আসলে আমাদের ডাকলে আমরা সেভাবে আলোচনা করবো।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জি এম মুজিবর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির স্মারকলিপিটি হাতে পেয়েছি। এখানে দুই অনুষদের সমঝোতার বিষয় রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছুটি শেষে দেশে এসে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত সোমবার থেকে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। দ্বিতীয় দিনেও তারা ক্লাস বর্জন করে কর্মসূচি পালন করেন। তবে এর আগে সর্বশেষ ২০২২ ও ২০২৩ সালে সারা দেশের কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাতিলের দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করেছিলেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
What's Your Reaction?






