পবিপ্রবি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির অভিযোগ
জান্নাতীন নাঈম জীবন, পবিপ্রবি প্রতিনিধি
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) বরিশাল ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যসেবা সংকট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে।
ক্যাম্পাসে একটি নামমাত্র হেলথ কেয়ার সেন্টার থাকলেও, সেটি কার্যত অকার্যকর। প্রায় ৫০০-৬০০ শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে নেই কোন প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, কোন প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়াই ঘণ্টাখানেকের পথ পাড়ি দিয়ে ছুটতে হয় শহরে, যা মুমূর্ষু রোগীর জন্যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্য দিকে, মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তারের কাজের অবহেলা পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিনি ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে সক্ষম নন। এছাড়া, ক্যাম্পাসে সব সময় ডাক্তারের দেখা মেলে না। এর বাইরে মাদকাসক্তির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে অবগত থাকার পরও প্রশাসনের নিশ্চুপ ভূমিকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করেছে ক্ষোভ ও হতাশা।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিসিপ্লিনের এক শিক্ষার্থী বলেন, "এখানে প্রাথমিক চিকিৎসার কোন ঠিকঠাক ব্যবস্থা নেই। প্রেসার মাপার যন্ত্র, ভালো মানের স্টেথোস্কোপ—কিছুই নেই। কেউ অসুস্থ হলে বরিশাল মেডিকেল নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামও নেই, আর কোন অ্যাম্বুলেন্সও নেই।
তিনি আরো বলেন, "আমাদের ডাক্তারের মধ্যেও তেমন উৎসাহ দেখা যায় না; তিনি ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসাও দিতে পারেন না। তাই আমাদের দাবি, এখানে নতুন একজন ভালো ডাক্তার ও একজন দক্ষ নার্স নিয়োগ দেওয়া হোক, যাতে শিক্ষার্থীরা দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতে পারে।
অ্যানিম্যাল সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মরিয়ম নেছা বর্ণা জানান, "আমাদের ২৪ ঘণ্টার জন্য একজন ডাক্তার অপরিহার্য। বিশেষ করে মেয়েরা রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রোভোস্ট ও শিক্ষকদের বারবার ফোন করতে হয় এবং তারপর বরিশাল যেতে হয়। এখানে ন্যূনতম অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থাও নেই। ক্যাম্পাসে যে ডাক্তার আছেন, তাকেও কখনও দেখিনি।
একই অনুষদের ২১তম ব্যাচের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ইসলাম রাফি তার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “অসুস্থ বন্ধুকে নিয়ে রাতের বেলা মাইক্রোবাসে করে হাসপাতালে যাওয়ার সময় খিঁচুনি উঠে যাওয়া বন্ধুর হাতের মুঠ সোজা করতে করতে মৃত্যুর সাথে লড়াই করাটা খুব কাছ থেকে দেখে এসেছি। আমার বন্ধুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু আমি তাকে একটুখানি অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দিতে পারিনি। অসহায় আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম তার মুখের দিকে। মনে হচ্ছিল আটকে গেছি কোন এক মৃত্যুকূপে।”
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ সাব্বির বলেন, "এখানে কোন স্টাফ নেই। সমস্ত কাজ আমাকে একাই করতে হয়। বহুবার বলার পরও কোন নার্স বা প্যারামেডিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাই অনেক সময় চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটে। আমাদের কোন অ্যাম্বুলেন্সও নেই। যেটা ছিল তাও নষ্ট। তবে কিছু দিন পূর্বে নষ্ট অ্যাম্বুলেন্সটি ভিসি স্যারের নির্দেশে মেরামতের জন্য মূল ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যদি এটি ঠিক না হয়, তবে বিক্রি করে নতুন অ্যাম্বুলেন্স কেনা হবে। আমাদের কোন অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। আমি ডিন স্যারকে এ বিষয়ে বহুবার বলেছি, কিন্তু এখনো কোন অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে, কোন শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্ট বা বড় কোন সমস্যা নিয়ে এলে তাকে বরিশাল মেডিকেলে পাঠানো ছাড়া উপায় নেই।"
মাদকাসক্ততার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, "মাদকাসক্তির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। বরং আমি বরিশালের একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে কাজ করি।"
এ বিষয়ে অনুষদের ডিন প্রফেসর ডঃ ফয়সাল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "ক্যাম্পাসে ডাক্তারের বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ করা হয়েছে সেই বিষয়গুলোর জন্য তাকে শোকজ করা হবে। তার বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির অভিযোগও উঠেছে। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া মেডিকেল সেন্টারের সরঞ্জামাদি ঘাটতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, "আমি এই বিষয়ে বরিশাল ক্যাম্পাসের ডিনের সাথে কথা বলেছি। শিক্ষার্থীরা যদি এই বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
What's Your Reaction?