নড়াইলে একদিনে শিক্ষকসহ তিন জনের অপমৃত্যু
ফরহাদ খান, নড়াইল
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদরের লক্ষীপাশায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ চুন্নু মোল্যা (৫২) নিহত হয়েছেন। তিনি রাজুপুর কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। শনিবার রাত আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
চুন্নু লোহাগড়ার আমাদা গ্রামের হাফিজার রহমান মোল্যার ছেলে। বর্তমানে গোপীনাথপুর এলাকায় বসবাস করতেন। এর আগে ৯ মে বাইসাইকেলে চুন্নু মোল্যা লক্ষীপাশা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের সামনে পৌঁছলে ওই এলাকার মুছা বিশ্বাস দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে তাকে (চুন্নু) ধাক্কা দেয়। এ দুর্ঘটনায় চুন্নু গুরুতর আহত হলে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকার পর শনিবার গভীর রাতে তিনি মারা যান।
ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ জানান, সড়কগুলোতে দ্রুতগতির মোটরসাইকেল স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। উঠতি বয়সের তরুণরা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে মানুষের জীবনহানি করছে।
শনিবার সকাল ৭টার দিকে নড়াইল-ফুলতলা সড়কের কাড়ারবিল এলাকায় বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কলেজ ছাত্র মামুন সমাদ্দার (২২) নিহত হয়েছেন। এ সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বাইসাইকেল চালক কাজেম আলী মন্ডল (৩৫) গুরুতর আহত হন। নিহত মামুন সদরের রঘুনাথপুর গ্রামের বাবলু সমাদ্দারের ছেলে। আহত কাজেম আলী নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর এলাকার আজিজ মন্ডলের ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে মামুন দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে নড়াইল শহর থেকে ফুলতলা সড়কে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কাড়ারবিলের মাঝে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইসাইকেল চালক কাজেম আলীকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ছিটকে পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মামুনের মোটরসাইকেলটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আহত কাজেম আলীর বাম পা ও ডান হাত ভেঙ্গে গেছে।
এদিকে, বজ্রপাতে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সরশুনা গ্রামে নবম শ্রেণির ছাত্র মিরাজ মুন্সীর (১৫) মৃত্যু হয়েছে। মাঠে গরু চরাতে গিয়ে রোববার বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মিরাজ সরুশুনা গ্রামের বিপুল মুন্সীর ছেলে এবং স্থানীয় এলএসজেএন ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র।
এ সময় ওই গ্রামের মাহফুজার মুন্সীর একটি গাভীও বজ্রপাতে মারা যায়। এ ঘটনায় মিরাজ মুন্সীর পরিবারে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে।
এদিকে, মিরাজের দিনমজুর বাবা বিপুল মুন্সী শুক্রবার গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া এলাকায় শ্রমবিক্রি করতে গিয়ে এখনো বাড়ি আসেননি। তিনি কোনো মোবাইল ফোনও ব্যবহার করেন না। তাই ছেলের মৃত্যুর সংবাদ কীভাবে তার বাবাকে জানাবেন, সেই দুশ্চিন্তার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার পরিবার।
এছাড়া, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরমঙ্গলহাটা গ্রামে বয়োবৃদ্ধ রিজিয়া বেগমের (৭০) গলায় ফাঁস লাগানো মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করে নড়াইল জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিজিয়া বেগমকে হত্যা করে তার গলার হার ও কানের দুলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। এর আগে শনিবার রাতের যে কোনো সময় তাকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, পাঁচ সন্তানের জননী রিজিয়া বেগম গ্রামের বাড়ি নড়াইলের চরমঙ্গলহাটায প্রায় সময়ে একাই থাকতেন। ঘটনার দিন তার ছেলে যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলাম শনিবার রাত ১২টার দিকে বাড়ি গিয়ে মা রিজিয়া বেগমকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। রিজিয়া বেগম যেখানে শুয়ে ছিলেন, তার পাশের জানালার সঙ্গেই গলায় ফাঁস লাগানো রয়েছে।
পরিবারসহ স্থানীয়দের ধারণা, বাড়িতে রিজিয়া বেগম ছাড়া তেমন কেউ না থাকার সুযোগে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র লুটে নেয় দুর্বুত্তরা। মাকে হত্যার খবর শুনে বাড়িতে আসেন তার ছেলে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হুমায়ুন কবিরসহ অন্য সন্তানরা।
এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে লোহাগড়া থানার ওসি কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকান্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
What's Your Reaction?