কমছে নদীর পানি, বন্যা কবলিত মানুষের জরাজীর্ণ অবস্থা

Aug 18, 2025 - 05:02
 0  4
কমছে নদীর পানি, বন্যা কবলিত মানুষের জরাজীর্ণ অবস্থা
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

মুসা মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজার-হাটে পানি ওঠায় চরম জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যাকবলিত পাঁচটি ইউনিয়নে ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জেলার পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করার পর গতকাল থেকে কয়েক সেন্টিমিটার কমেছে। পদ্মানদীর বিপদসীমা হলো ২২.০৫ মিটার এবং মহানন্দা নদীর বিপদসীমা ২০.৫৫ মিটার। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে ১৫ ঘণ্টায় ১৭ সেন্টিমিটার কমেছেপানি বিপদ সীমার ৫৯ সেন্টিমিটার  নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ অঞ্চলে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক পরিবারগুলো। ধান, পাট, কলা, শাকসবজি ও আবাদি জমি পানির নিচে ডুবে গেছে। মাছের ঘের ভেসে গিয়ে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মৎস্যচাষিদের। পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য ও আশ্রয়ের সংকট তৈরি হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বাজারে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গরিব-অসহায় মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যায় প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়ছে কৃষকরা। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারেনি কৃষি বিভাগ৷ বন্যার পানি কমলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. ইয়াছিন আলী।

পানি উঠে যাওয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছে না। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে পানিবাহিত রোগে। অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জরুরি ত্রাণ সহায়তা না পেলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

সাতরশিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, গত ১০ দিন থেকে পানি বন্দী হয়ে আছি। ঠিক মতো রান্না করতে পারি না। খাইতে পারি না। ধানের জমি সব নষ্ট হয়ে গেছে। কি করব বুঝতে পারছি না। কোন সহযোগিতাও পাইনি। কাল থেকে একটু করে পানি কমছে। এতে ভাঙ্গনের ভয়ে দিন পার করছি। কিভাবে ঘরবাড়ি ফসলের ক্ষেত রক্ষা করব তার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছি।

অনেকেই বলছেন, বন্যার কারণে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হতে পারে অনেক। এতে মৌসুমি ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং কৃষকদের লোকসানের  বোঝা বাড়বে। সামগ্রিকভাবে গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দুর্লভপুর ইউনিয়নে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দা মোঃ আব্দুল বারি বলেন, আমার বাড়ি হতে ৪শ মিটার দূরে পদ্মা। নদী ভাঙ্গনে আমাদের বংশের কয়েকটি বাড়ি এখন রয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে উজানে দুই কিলোমিটার এলাকায় পানি উঠে গেছে৷ এতে এই এলাকা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমাদের বাড়ি থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে ভারতের  ফারাক্কা বাধ। সবকটি গেট ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের পানি বন্দি করে দিয়েছে। প্রতিবছর এমনই করে। প্রতিবেশী দেশ হয়ে তারা দুশমনের মতো করে। সরকারের নিকট অনুরোধ, আমাদের এলাকায় একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা জন্য। বাঁধ নির্মাণ না করলে একসময় এ গ্রামের কোন চিহ্ন থাকবে না। তাই আমাদের রক্ষা করতে একটি বাঁধ চাই।

একই এলাকার বাসিন্দা কৃষক মোঃ নূহ আলম বলেনহঠাৎ করে পানি বাড়তে শুরু করলো, এক রাতেই আমাদের সব ফসল তলিয়ে গেল। মাঠের ধান, সবজি কিছুই রক্ষা করতে পারলাম না। প্রচুর পরিমাণ ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষের বিঘার পর বিঘা ধান ডুবে হারিয়ে গেছে। ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। কোথায় যাবো, কী খাবো। সে চিন্তায় আছি। সারা বছর রিশ্রম করে জমিতে যা ফলাই, এক মুহূর্তে সব শেষ হয়ে গেল।

একই এলাকায় পানি বন্দী একজন গৃহিণীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা খুব কষ্টে আছি। বন্যার পানিতে ঘরের সব কিছু ভেসে গেছে। রান্না করার মতো কিছুই নেই, চুলাও পানির নিচে। এখন নিরাপদ খাবার পানিটুকু নেই। বানের পানি পান করছি। আমরা খাবো কী, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চিন্তা। শুকনো খাবারও ফুরিয়ে আসছে। দিন-রাত পানি আর দুর্ভোগের মধ্যে কাটছে। কবে যে এ কষ্ট থেকে মুক্তি পাবো, আল্লাহই জানেন।

পদ্মা নদীর পানি দুইদিন স্থিতিশীল থাকার পার ১৫ ঘণ্টায় ১৭  সেন্টিমিটার কমেছেপানি বিপদ সীমার ৫৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মহানন্দা নদীতে বিপদসীমা ৮৪ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব। তিনি বলেন, এবছর হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়া অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে গতকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এতে নদী ভাঙ্গন তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পদ্মা নদীর পানি কমলে নদী ভাঙ্গন বাড়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online