হল থেকে তাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা? রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি

Aug 4, 2024 - 04:17
 0  44
হল থেকে তাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা? রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

জান্নাতীন নাঈম জীবন, পবিপ্রবি প্রতিনিধি

সব হল সিলগালা করে শিক্ষার্থীদের তাড়িয়ে দিয়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) প্রশাসন। শিক্ষার্থী শূন্য ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পবিপ্রবি প্রক্টর।  

শুক্রবার উল্লেখিত পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা দেয়া হয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত কোন নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করণের লক্ষে পবিপ্রবি প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। 

উল্লেখ্য, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে নির্দেশনা দিতে রাগান্বিত অবস্থায় "এই মিয়া এই" সম্বোধন এবং শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, "বাংলাদে সরকার খুব সহজে ক্ষমতা ছাড়বে না, গদি ছাড়বে না, যদি আরও ৫ হাজার মানুষ মারা লাগে সরকার চিন্তা করবে না।" 

এদিকে, এই বিজ্ঞপ্তি  প্রকাশ পাওয়া মাত্র শিক্ষার্থীদের মাঝে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পবিপ্রবিয়ান গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো: রনি হোসাইন বলেন, "যারা ক্যাম্পাসে থাকলে নিরাপত্তা দিতে পারবে না বলে হল থেকে বের করে দেয় পোলাপানরে, তারাই নাকি দিবে নিরাপত্তা হাস্যকর।" 

আরেক শিক্ষার্থী মো: রেদোয়ান উল্লাহ বলেন, "সবাইকে বাসায় নিরাপত্তা দিবে? ক্যাম্পাসে যখন শিক্ষার্থী ছিল তখন কোথায় ছিল এই নোটিশ।" 

শিক্ষার্থী যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রক্টর সকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল হাসানের কাছে শিক্ষার্থী শূন্য ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কি ধরনের নিরাপত্তা দিবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি যারা আছে তাদের নিরাপত্তাই কাজ করব। এছাড়াও কোন কোন সেক্টর নিয়ে কাজ করব সেটা প্রক্টর ভালো বলতে পারবে। কারো সমস্যা হলে সরাসরি না পারলেও মোবাইলের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে।" 

কোন কোন সেক্টর নিয়ে কাজ করবে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি 

এদিকে, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসুর সাম্প্রতিক বিতর্কিত মন্তব্য, শিক্ষার্থীদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে সম্বোধন, অসদচারণ ও তাদের দিকে তেড়ে যাওয়ার বিষয়কে দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও অমানবিক আচরণ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেছে পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। 

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান মিয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “গত ২রা আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনির প্রায় সকল জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসুর বক্তব্য 'আরো ৫ হাজার মানুষ যদি মারা লাগে সরকার চিন্তা করবে না ও শিক্ষার্থীদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যভাবে সম্বোধন, অসদচারণ ও তাদের দিকে তেড়ে যাওয়ার বিষয়, পরবর্তীতে এই বক্তব্যের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া এবং শিক্ষকদেরকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক মন্তব্যসহ সকল বিষয় পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নজরে এসেছে এবং তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “আবাসিক হল থেকে কয়েকজন অসহায় শিক্ষার্থীকে (যারা টিউশনি করে পড়াশোনা খরচ চালায়) জোরপূর্বক বের করে দেয়ার প্রাক্কালে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রফেসর সন্তোষ বসুর এহেন দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও অমানবিক আচরণ পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি কোনোভাবেই সমর্থন করে না বরং তা প্রত্যাখান করছে।” 'আরো ৫ হাজার মানুষ যদি মারা লাগে সরকার চিন্তা করবে না' এই ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য কেন রেজিস্ট্রার দিলেন এবং এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে অনতিবিলম্বে প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসুকে সকল অতিরিক্ত দায়িত্ব (রিজেন্ট বোর্ড মেম্বার, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর) থেকে পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, ৩০ জুলাই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিতর্কিত মন্তব্যে তোপের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু। এ সংক্রান্ত কয়েকটি অডিও ক্লিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপ সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পেজে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online