১৬ বছরের নিচে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ হলো আয়ারল্যান্ডে

মো: সাখাওয়াৎ হোসেন (সাখাওয়াৎ লিটন)
বিরুপ প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য বিশ্বে প্রথমবারের মতো ১৬ বছরের কম বয়েসীদের জন্য টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, এক্স ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড সরকার।
এই আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তি কোম্পানি গুলোকে বয়স যাচাই প্রযুক্তিকে আরো উন্নত করতে সময় বেধে দেয়া হয়েছে। এই আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের জরিমানার ব্যবস্থাও রাখা হয় এই আইনে।
সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী সায়মন হ্যারিস ১৬ বছরের নিচে শিশুদের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেন। তিনি একে কেবল প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয় নয় বরং একটি সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সংকট হিসেবেও উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এখন আর প্রশ্ন করার সময় নেই -আমরা কিছু করব কি না; বরং প্রশ্ন হওয়া উচিত – কখন এবং কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করবো। এই প্রেক্ষাপটে অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টান্তকে তিনি সামনে তুলে আনেন।
স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমে বেড়ে ওঠা বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের নিয়ে সায়মন হ্যারিস যথার্থই উদ্বিগ্ন। তিনি একে “টাইম বোমা” আখ্যা দিয়ে বলেন – এখনকার শিশুরা এমন এক প্রজন্ম, যারা বয়সের তুলনায় অনেক বেশি ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যার মানসিক প্রভাবও কম নয়।
এক জরিপে জানা যায় আয়ারল্যান্ডে ডিজিটাল সম্মতির বয়স ১৬ হলেও, অধিকাংশ জনপ্রিয় অ্যাপ ১৩ বছরের শিশুদের জন্য উন্মুক্ত। অথচ Cyber Safe Kids-এর তথ্য অনুযায়ী, ১২ বছর বয়সী শিশুদের ৮৪ শতাংশেরই সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং ৯৪ শতাংশ শিশু ৮ থেকে ১২ বছর বয়সেই স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করে। শুধু সচেতনতা বা ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব নয়। অভিভাবক বা শিশুদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়াও ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রযুক্তি কোম্পানি গুলোকেও এখন জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তাদের কেবল লাভের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না – সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও গ্রহণ করতে হবে।
তবে এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নানা ধরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বয়স যাচাই প্রযুক্তি এখনও ত্রুটিমুক্ত নয়, এর ফলে শিশুরা বিকল্প পথ খুঁজে নেয় এবং অনেক অভিভাবকও জানেন না কীভাবে সন্তানের ডিজিটাল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করবেন।
সামাজিক মাধ্যমের বিষয়টি বর্তমান সময়ে আর কেবল প্রযুক্তি বা বিনোদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি একটি সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য হুমকীতে পরিণত হয়েছে। এজন্য শুধু আইন নয় – প্রয়োজন শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যখাত ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ।
এ বিষয়টি নিয়ে আইরিশ ইনডিপেনডেন্ট টিডি (জন প্রতিনিধি) পল গোগার্টির মতো নেতারা নাগরিক কনভেনশনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে সাধারণ মানুষও মতামত দিতে পারবে। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত যৌক্তিক। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, শিশুর মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা রক্ষায় এখনই সময় এমন কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার প্রশ্নে আর দেরি করার অবকাশ নেই। সামাজিক মাধ্যমে বয়সসীমা কঠোরভাবে প্রয়োগ, অভিভাবকদের সচেনতার সাথে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খারাপ দিক বিবেচনায় নিয়ে কঠোর এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আইরিশ অভিভাবকরা। সূত্রঃ আইরিশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট
What's Your Reaction?






