সীমান্তে উত্তেজনার ঘটনায় পতাকা বৈঠক, পরিস্থিতির উন্নতি
মুসা মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কিরণগঞ্জ সীমান্তে ফসল কাটা নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের সাথে ভারতীয় নাগরিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী (বিএসএফ)।
সংঘর্ষ পরিস্থিতির জন্য শনিবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রতিবাদের মুখে দুঃখ প্রকাশ করে বিএসএফ। বাংলাদেশের ভূখন্ডে এসে ভারতীয় নাগরিকরা জমির ফসল ও আম গাছ কাটার অভিযোগে সীমান্তে জড়ো হয় বাংলাদেশিরা। অপরদিকে ভারতীয় অংশে ফসল কেটে নেওয়ার অভিযোগে ভারতীয়রা জড়ো হয় সীমান্তে। এক পর্যায়ে দুই দেশের জনসাধারণের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ভারতীয়রা বাংলাদেশীদের জনগণকে লক্ষ্য করে টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত তিন জন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শিবগঞ্জের চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে দিনভর উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করে।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিজিবি-বিএসএফ এর পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। মহানন্দা ব্যাটালিয়ন ৫৯ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, কিরণগঞ্জ বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১৭৭/৩-এস এর নিকট ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব পূর্ণ এলাকায় শূন্য লাইন এ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশী নাগরিকের আম গাছ এর ডাল কেটে দেয়। গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশী ও ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির এক পর্যায়ে আনুমানিক কয়েকশ‘ ভারতীয় নাগরিক সীমান্তে জড়ো হলে বাংলাদেশী নাগরিকরাও সীমান্তে আসে। এসময় দুই দেশের নাগরিক সীমান্তে শূন্য লাইনে সমবেত হয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে বিএসএফ ৭/৮ টি ককটেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ প্রেক্ষিতে মহানন্দা ব্যাটালিয়ন ৫৯ বিজিবির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত বাংলাদেশী নাগরিকদের বোঝানোর ফলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে চৌকা বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১৭৭/২-এস এর নিকট মহানন্দা ব্যাটালিয়ন ৫৯বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল গোলাম কিবরিয়া এবং বিএসএফ এর ১১৯ ব্যাটালিয়ন কমান্ড্যান্ট সুরাজ সিং এর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে সহকারী পরিচালক, ৫৯ বিজিবি এবং বিএসএফ এর তিন জন ষ্টাফ অফিসার উপস্থিত ছিলেন বলে বিজিবি জানায়।
পতাকা বৈঠকে বিএসএফ কমান্ড্যান্ট সুরাজ সিং এমন ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। ভারতীয় নাগরিকদের সীমান্ত হতে সরিয়ে নেয়। বিএসএফকে শূন্য লাইন হতে ১৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।
বিজিবি-বিএসএফ এর পতাকা বৈঠকের পর রবিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্তে নতুন করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বেরিয়ে আসছে শনিবারের সংঘর্ষের ক্ষয়ক্ষতি। তবে একটি বরই বাগান কেটে ফেলেছে ভারতীয়রা। আম গাছসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতেও ক্ষতি হয়েছে। বিরূপ পরিস্থিতি না হলেও শূন্যরেখার কাছে কয়েকশ মানুষ জড়ো হওয়ার কারণে পায়ের চাপে নষ্ট হয় জমির ফসল।
কৃষকরা জানান, শনিবার চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে সংঘাত ও উত্তেজনার ঘটনায় বিপুল ফসল নষ্ট হয়েছে বাংলাদেশিদের। ভুট্টা, পেঁয়াজ, সরিষার ফলন ধ্বংস হয়েছে। মাসুদ রানা নামে একজন কৃষক জানান, শনিবার দুপুরের দিকে দু-তিন শ‘ লোক আমার ভুট্টা ক্ষেতের উপর দিয়ে হেঁটে চলে গেলো। এতে আমার ভুট্টা খুঁচে শেষ করে দিয়েছে। এখন সেচ দিয়ে চেষ্টা করছি বাঁচানোর, বিক্ষুব্ধ মানুষকে থামানো সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মিয়া বলেন, সীমান্তে উত্তেজনার সময় প্রচুর উৎসুক জনতা গিয়েছিল। সেই সময় তারা মাঠগুলোতে থাকা সরিষা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষেত দিয়ে যায়। এতে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাবো।
সীমান্ত এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। স্থানীয় কৃষক মোঃ ফারুক বলেন, সীমান্ত এলাকা এখন স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। কোন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নাই। শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. কামাল উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তের প্রান্তে বিএসএফ ও ভারতীয়রা ঢুকে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে শনিবার উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরী হয়েছিল। পরে বিজিবি ও স্থানীয় সাধারণ জনগণ তাদের এই অপচেষ্টা রুখে দেয়। বিজিবির সদস্যদের নিয়মিত টহল দিতে দেখছি।
সীমান্তের পরিস্থিতি বিষয়ে মহানন্দা ব্যাটালিয়ন ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে গতকালের ঘটনায় এই এলাকার কৃষকদের ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। এটা শুধু কৃষকের ক্ষতি নয় এটা দেশের ক্ষতি। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে জনসাধারণের সাথে মতবিনিময় করছি যাতে সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার আছে। সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থানে বিজিবি সদস্যরা। বাড়ানো হয়েছে টহল-তল্লাশিও।
What's Your Reaction?