‘শতভাগ শিক্ষার্থী কম্বাইন্ডের পক্ষে হলেও এটি গ্রহণযোগ্য নয়’

Aug 26, 2025 - 05:53
 0  61
‘শতভাগ শিক্ষার্থী কম্বাইন্ডের পক্ষে হলেও এটি গ্রহণযোগ্য নয়’
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

ময়মনসিংহ, আগস্ট (বাকৃবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিম্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, শিক্ষার্থীরা শুধু নিজেদের চাকরির বিষয়টি ভাবছে, কিন্তু শিক্ষকেরা জাতীয় স্বার্থে চিন্তা করেন। ভোটের মাধ্যমে শতভাগ শিক্ষার্থীও যদি কম্বাইন্ডের পক্ষে ভোট দেয়, তবুও এটি গ্রহণযোগ্য নয়৷ কেননা কেবল স্নাতক অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাই এই সেক্টরের অংশীদার নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তারা যথেষ্ট প্রাজ্ঞ নয় বলে আমরা মনে করি। প্রাণীসম্পদ সেক্টরে আরও অংশীজন আছে, তাদের মতামত নেয়া প্রয়োজন ছিল। এছাড়া সদ্য ভর্তি হওয়া স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটদানের তুলনায় স্নাতক পঞ্চম বর্ষ বা এমএস (মাস্টার্স) শিক্ষার্থীদের ভোটদানের সুযোগ দেয়া অধিকতর যুক্তিযুক্ত ছিল।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কমপ্লেক্সে আ‌য়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের অনুষদের গ্রাজুয়েটরা বেকার নন। তারা ইতোমধ্যে প্রাইভেট সেক্টর, পোল্ট্রি, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (ডিএলএস) এবং ডেইরি সেক্টরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যদি ডিএলএস বা মন্ত্রণালয় জোর করে যৌথ ডিগ্রি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, তা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করা হলে আমরা বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নে

সংবাদ সম্মেলনে পশুপালন অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ বলেন, প্রায় এক মাস ধরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কম্বাইন্ড (বিএসসি ইন ভেট সায়েন্স অ্যান্ড এএইচ) ডিগ্রির দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে অনুষদ ভবন, প্রশাসনিক ভবনসহ শিক্ষক কমপ্লেক্স ও রেললাইন অবরোধ করেন। এতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাকৃবির পশুপালন অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ।

এসময় তারা অভিযোগ করে আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন এখানে ভর্তি হয়েছেন, তখন এই ডিগ্রি সম্পর্কে অবগত হয়েই ভর্তি হয়েছেন। অথচ এখন তারা কম্বাইন্ড ডিগ্রি চাচ্ছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন পরিপন্থী ও নজিরবিহীন। এছাড়া তারা ৯ আগস্ট ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে যেতে নবীন শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক বাধা প্রদান করেন এবং অনুষদের শিক্ষকদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানহানিকর পোস্ট করা হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে চেয়ে যে ভোটের আয়োজন করে, সেটিতেও জোরপূর্বক প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন কিছু শিক্ষার্থী। এছাড়া ভেটেরিনারি অনুষদের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভোটে অংশগ্রহণ করলেও পশুপালন অনুষদের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটদানের সুযোগ প্রদান না করা তীব্র নিন্দা জানান শিক্ষকবৃন্দ।

শিক্ষকবৃন্দ আরও অভিযোগ করেন, ফ্যাসিবাদী সরকাররের চক্রান্তে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন ২০১৯-এর মাধ্যমে অন্যায়ভাবে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করা হয়। যেখানে ৭০ ভাগ পশু চিকিৎসা এবং ৩০ ভাগ পশু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়ানো হয়। যা দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য কখনোই যথেষ্ট নয়। বিশেষায়নের এই যুগে কম্বাইন্ড নামক অসম্পূর্ণ ডিগ্রির দ্বারা দেশের প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের গতি মন্থর ও স্থবির হবে। এমন পরিস্থিতিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কম্বাইন্ড ডিগ্রিকে প্রাধান্য দেয়ার বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তকে আমরা অনৈতিক মনে করি। প্রাণীসম্পদের সমস্যা নিরসনে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমানের প্রস্তাবিত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাজন (ডিএলএস বিভাজন)বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি এনিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল গঠন, পাঠ্যক্রম আধুনিকীকরণ, পোল্ট্রি ও ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড গঠন, প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (এলইও) পদ সৃজন ও বাস্তবায়ন, এবং প্রাইভেট খাত, বিএলআরআই, মিল্ক ভিটা ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে এনিমেল হাজবেন্ড্রি গ্রাজুয়েটদের নিয়োগ নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী প্রথম ১৫ দিন ক্লাস না করলে ভর্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়। যেহেতু প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনো পর্যন্ত ক্লাসে আসেনি, বিষয়টি এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে, তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত জানাবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ডিগ্রি পরিবর্তন বা অনৈতিক কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা মেনে নেয়া হবে না। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে। দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে এনিমেল হাজবেন্ড্রি ডিগ্রিধারীদের চাকরিক্ষেত্র প্রসারিত করতে আমরা চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীরা অতিসত্বর ক্লাস পরীক্ষায় ফিরবেন বলে আশা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ভূঞা, অধ্যাপক ড. মোখলেছুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল মামুন, অধ্যাপক ড. মো শওকত আলী, অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্যা, অধ্যাপক ড. মো ইলিয়াস হোসেন, অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুমসহ পশুপালন অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online