বৃটেনে কঠিন হচ্ছে অভিবাসন নীতি, শংকায় বাংলাদেশীরা

May 14, 2025 - 18:02
 0  8
বৃটেনে কঠিন হচ্ছে অভিবাসন নীতি, শংকায় বাংলাদেশীরা
Photo: ah/ov

মো: সাখাওয়াৎ হোসেন (সাখাওয়াৎ লিটন)
অভিবাসন নীতিতে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন এনেছে, যা ‘ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন’ এবং স্পাউস ভিসার নিয়মে সরাসরি প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। 
সোমবার প্রকাশ হয় এই নীতিমালা। প্রকাশিত নতুন এই সংস্করণ যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তুলবে বলে জানা গেছে। এতে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নতুন করে দেখা দিয়েছে শংকা।
নতুন এই নীতিমালায় আইএলআর-এর জন্য যোগ্যতার মানদণ্ড আরও কঠোর করা হয়েছে। বিশেষ করে, আর্থিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতির জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি আয় প্রমাণসহ দেখাতে হবে।
নতুন এই নীতিমালায় আইএলআর-এর জন্য ন্যূনতম আয়ের সীমা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে, যা নিম্ন আয়ের মানুষ এবং নির্দিষ্ট কিছু পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে।
এছাড়া ইংরেজি ভাষার দক্ষতা এতদিন একটি মৌলিক শর্ত থাকলও এখন আরও উচ্চতর স্তরের ইংরেজি দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট ধরনের ইংরেজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত আরোপ করা হতে পারে।
‘অবিচ্ছিন্ন বসবাস’ সম্পর্কিত নিয়মও কঠোর করা হয়েছে নীতিমালায়। আইএলআর-এর জন্য নির্ধারিত সময়কালের মধ্যে কতদিন যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকা যাবে, সেই সীমাও কমিয়ে আনা হয়েছে। এই নিয়ম ভঙ্গ করলে আইএলআর-এর যোগ্যতা হারানোর আশঙ্কা থাকবে।
এই পরিবর্তনগুলো মূলত যাদের ওপর প্রভাব ফেলবে:
• দক্ষ কর্মী ভিসাধারী: যারা কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যে আছেন, তারা আইএলআর-এর জন্য আবেদন করতে গিয়ে বাড়তি আর্থিক চাপে পড়বেন।
• পরিবারভিত্তিক ভিসাধারী: বিশেষ করে স্পাউস ভিসায় থাকা ব্যক্তিদেরও বাড়তি আয়ের শর্ত পূরণ করতে হবে।
• দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দা: যেসব ব্যক্তি ১০ বছর বা তার অধিক সময় ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং আইএলআর-এর আবেদন করছেন, তারাও নতুন শর্তের আওতায় পড়বেন।
স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক যোগ্যতার সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দারা তাদের বিদেশি জীবনসঙ্গীদের যুক্তরাজ্যে আনতে গেলে আগের তুলনায় অনেক বেশি আয় দেখাতে হবে। যারা বর্তমানে স্পাউস ভিসায় আছেন এবং মেয়াদ বাড়াতে চান, এ প্রক্রিয়ায় তাদেরও নতুন অর্থনৈতিক শর্ত পূরণ করতে হবে, না হলে আবেদন বাতিলের শংকায় পড়তে হবে।
নতুন এই প্রক্রিয়ায় বর্তমান অভিবাসীরা প্রভাবিত হবেন। যারা এরই মধ্যে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন, তাদের ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বৃটিশ সরকার জানিয়েছে, এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কিছু সাময়িক ব্যবস্থা নেয়া হবে, তবে তার বিস্তারিত এখনো স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, আইএলআর বা ভিসা নবায়নের সময় এদের এই কঠোর নীতিমালার অধীনেই মূল্যায়ন করা হবে। ফলে অনেকেই যারা পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করেছিলেন, তারা এবার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এ বিষয়ে বৃটেনে বসবাসরত আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘নতুন শর্ত আরোপ নিঃসন্দেহে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বড় ধরণের প্রভাব ফেলবে। যদিও এই প্রস্তাবের পূর্ণাঙ্গ রূপ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে বৃটেনে বসবারত মানুষ এ বিষয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। বর্তমান সরকার অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এখন বৈধ অভিবাসীদের নতুন নতুন শর্তের ফাঁদে ফেলছে। যা তাদের জীবনযাত্রায় বিরুপ প্রভাব ফেলবে’।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online