মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন কৃষকদের
মুসা মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
বিষমুক্ত সবজি চাষে অন্যতম উপায় মালচিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে খরচ কম হওয়ায় বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন অনেক চাষি। জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা টমেটো সহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করছেন এই পদ্ধতিতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায় বোয়ালিয়া ও পার্বতীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় মালচিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষকরা।
চাষিরা বলছেন, মালচিং পেপার পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমির রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকে। এতে সেচ কম লাগে। সার ও ওষুধ খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক কমে যায়। ফলন হয় বেশি এবং গাছের জীবন দীর্ঘ হয়। এতে সাধারণের চেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায়। তাই টমেটো চাষে মুনাফা হয় কয়েকগুণ।
গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কৃষক বাবু গত পনেরো বছর থেকে এই এলাকায় টমেটো চাষ করছেন। তবে এবার তার চাষাবাদ পদ্ধতি ভিন্ন। স্থানীয় কৃষি অফিসের সহোযোগিতায় ও পরমর্শে এবছর তিনি মালচিং পেপার পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন। বাবু তাঁর টমেটো ক্ষেত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানোর সময় জানালেন এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের সুবিধার কথা। বাবুর জমিতে দেখা যায় ছোট-বড় আধাপাকা অনেক টমেটো রয়েছে। তিনি চলতি বছরে ৫০ শতক জমিতে আগাম জাতের টমেটোর চাষাবাদ করেছেন। মালচিং পদ্ধতিতে চাষা করায় তাঁর উৎপাদন খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকার পরিবর্তে ৮০ হাজার টাকা মতো। খরচ বাদ দিয়ে ২ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
এই পদ্ধতিতে আগাম টমেটো চাষ করে কৃষক ছগির মিয়া ব্যাপক সাফল্য ও অধিক লাভবান হওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন। ফলে চলতি বছর তাঁকে দেখে উৎসাহিত হয়ে আরও কৃষক টমেটোর আবাদ করেছেন। তাঁরাও সাফল্য পেয়েছেন বলে জানান।
এদিকে, চলতি বছরেও প্রতিদিন অনেক কৃষক বাবুর টমেটো ক্ষেতে এসে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাঁরাও আগামীতে এই পদ্ধতিতে আগাম টমেটোর আবাদ করবেন বলে নিয়ম কারণ ও পদ্ধতি বিষয়ে জানছেন।
মালচিং পেপার পদ্ধতিতে টমেটো চাষ পদ্ধতি ও সুবিধা বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার জানান, জমিকে চাষ দিয়ে উত্তমরূপে তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করতে হয়। সেখানে বীজ বপন করতে হয়। তারপর সেই বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। মালচিং পেপার হলো বিশেষ ধরনের পলিপেপার (পলিথিন)। বীজগুলো থেকে চারা গজানোর পর চারার স্থানগুলো থেকে মালচিং পেপার ছিঁড়ে দিতে হয়। যাতে চারাগুলো সহজে বেড়ে উঠতে পারে।
মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। এতে নিড়ানি দেওয়ার জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। সেচের অতিরিক্ত পানি জমে চারা বিনষ্ট হয় না। বাড়তি সারের প্রয়োজন হয় না। উৎপাদন খরচ কমে যায়। জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায়। ফলন অনেক বেশি হয়। গাছের আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এতে কৃষক সব দিক থেকে লাভবান হয়। কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শে এই অঞ্চলের আরও কৃষক মালচিং পদ্ধতিতে আগাম টমেটোসহ অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসল আবাদ করেছে বলে জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, জেলায় ২০২২ সালে ১৮৫০ হেক্টর ও ২০২৩ সালে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বছরে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিকটন টমেটো উৎপাদন হয়।
What's Your Reaction?