নারী ইউপি সদস্যকে পরকীয়া প্রেমিক ধর্ষণের অভিযোগ
নড়াইল, ২৮ ডিসেম্বর (জেলা প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) – নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নারী মেম্বার বাসনা মল্লিককে (৫২) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। দু'দিন চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যু হয়েছে তার।
পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে পরকীয়া প্রেমিক তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ মাইজপাড়া ইউপির জনপ্রতিনিধিরা। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ, ভুক্তভোগীর পরিবার এবং মাইজপাড়া ইউপি সূত্রে জানা যায়, ২৪ ডিসেম্বর দাপ্তরিক কাজসহ উপকারভোগীদের মাঝে টিসিবির পণ্য দিতে নড়াইলের মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে যান নারী মেম্বার বাসনা মল্লিক। কাজ শেষে নিজ বাড়ি মাইজপাড়ার পোড়াডাঙ্গা গ্রামে ফেরার পথে পাশের দৌলতপুর গ্রামের পরকীয়া প্রেমিক রজিবুলের মোবাইল ফোন পেয়ে তার কাছে পাওনা ১০ হাজার টাকা আনতে সেখানে যান ইউপি মেম্বার বাসনা মল্লিক।
এরপর পরকীয়া প্রেমিক রজিবুলসহ তার এক সহযোগী বাসনাকে ধর্ষণ করে। এরপর লোকলজ্জার ভয়ে বাসনা মল্লিক বিষাক্ত জাতীয় কিছু পান করেন। তবে তার পরিবার দাবি করেন, তাকে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছে। পরকীয়া প্রেমিক রজিবুল, ফারুক হোসেনসহ অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। মাইজপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা বলেন, বিগত সরকারের আমলে রজিবুলসহ তার সহযোগীরা আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচীতে সক্রিয় ছিলেন।
এদিকে, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে বাড়িতে এসে খাবার খাওয়ার পর বমি শুরু করেন বাসনা। এরপর তার অসুস্থতা বেড়ে গেলে পরেরদিন বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দু'দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে মারা যান তিনি। এরপর শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে তার মরদেহ বাড়িতে আনা হয়।
এ ব্যাপারে বাসনা মল্লিকের ছেলে রিংকু মল্লিক বলেন, পাওনা টাকা দেয়ার কথা বলে রজিবুল মোবাইল ফোনে আমার মাকে দৌলতপুর গ্রামে একটি বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে আমার মাকে ধর্ষণ করেছে। আমার মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিচার চাই। রিংকুর স্ত্রী বলেন, মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে এসে আমার শাশুড়ি বমি করেন। অবস্থা খারাপ হলে বুধবার দুপুরে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করি। অনেক চেষ্টার পরও শাশুড়িকে বাঁচানো গেলো না।
এদিকে, নারী ইউপি মেম্বার বাসনা মল্লিকের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের চিহিৃত করে যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তার ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। এ ঘটনায় মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফুরা খাতুন বলেন, মঙ্গলবার ইউপি কার্যালয়ে আমাদের সঙ্গে দাপ্তরিক কাজ করেন বাসনা মল্লিক। পরেরদিন পরিষদে না আসায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার জ্বর হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জানতে পারি তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বাসনা মল্লিকের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হবে বলে আশা করছি।
নড়াইল সদর থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, বাসনা মল্লিক বিষপান জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এছাড়া পরকীয়া প্রেমের সূত্র ধরে তার ওপর যৌন হয়রানিরও ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে ইউপি সদস্য বাসনা রানীর মৃত্যুর বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় শনিবার বেলা ১১টার দিকে দৌলতপুর গ্রামের ফারুক হোসেনকে (৬০) মাগুরা জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
What's Your Reaction?