ঢাকার রাস্তায় দেখা যাবে নিরাপদ রিকশা

মো: সাখাওয়াৎ হোসেন (সাখাওয়াৎ লিটন)
দেশের রাস্তায় পায়ে চালিত ও ব্যাটারি চালিত এই দুই ধরনের রিকশা চলতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক কালে ব্যাটারি চালিত নিবন্ধনহীন ও চালকের প্রশিক্ষণ না থাকায় এর সংখ্যার সাথে সাথে বেড়েছে দুর্ঘটনার হার। এর গতি সাধারণ রিকশার চেয়ে বেশি। নিরাপত্তা দুর্বল। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহন ঠেকাতে ঢাকার রাস্তায় এখন দেখা যাবে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রিকশা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা পুরোনো রিকশা পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে তুলে নিয়ে নতুন মডেলের রিকশা ঢাকার রাস্তায় চলাচলের অনুমোদন দেবেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একটি দল রিকশার নতুন এই মডেল তৈরি করেছে। এই মডেলের রিকশা হবে সাধারণ রিকশার চেয়ে অনেক নিরাপদ এবং খরচ হবে বর্তমান ব্যাটারি চালিত রিকশার সমান।
বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. এহসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের গবেষক দল এই নিরাপদ রিকশার নকশা করেছেন। অধ্যাপক এহসান জানান, ২০২২ সাল থেকে তিনি বাড়তি নিরাপত্তাযুক্ত রিকশার নকশা করা নিয়ে কাজ করছেন। অতীতে সরকারের সঙ্গে এবিষয়ে যোগাযোগ করলেও সাড়া পাননি তিনি।
গবেষক দলে আরো ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ সালাম আকন্দ ও মো. আমান উদ্দীন, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান খান এবং গবেষণা প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন মো. আসাদুজ্জামান ও আবদুল আজিজ ভুঁইয়া।
নতুন মডেলের এই রিকশা মূলত রাস্তায় চলাচলকারী ইজিবাইকের মতো। গবেষকরা জানিয়েছেন, রিকশায় ১৬টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা দেশে প্রচলিত ১২ ধরনের ব্যাটারি চালিত রিকশার নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করেছেন। রিকশার দৈর্ঘ্য হবে তিন দশমিক দুই মিটার, প্রস্থ দেড় মিটার এবং উচ্চতা দুই দশমিক এক মিটার। সব মিলিয়ে আকার হবে এখনকার রিকশার মতোই। তাদের মতে, রিকশাটি ৩২৫ থেকে ৪২৫ কেজি পর্যন্ত ওজন সহজেই বহন করতে পারবে। রিকশাটির তিনটি চাকায় হাইড্রোলিক ডিস্কব্রেক ও বিকল্প পার্কিং ব্রেক সংযোজন করা হয়েছে। ফলে রিকশা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
সাধারণ রিকশায় লুকিং গ্লাস বা ইন্ডিকেটর নেই। ফলে রিকশা ডানে অথবা বাঁয়ে মোড় নিলে পেছনের যানবাহনের চালকেরা তা বুঝতে পারেন না; যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে। নতুন রিকশায় লুকিং গ্লাস ও ইন্ডিকেটর থাকবে।
নতুন রিকশায় ছাউনি ও কাচের উইন্ডশিল্ড থাকবে। ফলে বৃষ্টিতে চালক ও যাত্রীদের ভিজতে হবে না। নতুন রিকশায় কাঠামোর সঙ্গে স্থায়ীভাবে যুক্ত করা হয়েছে হেডলাইট, যাতে রাস্তার দৃষ্টিসীমা ঠিক থাকে। নতুন হেডলাইটে হাইবিম, লোবিম ও ডিআরএল (ডেটাইম রানিং ল্যাম্প) যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এই বাতি চালককে সড়কে চলাচলের সময় দেখতে এবং রিকশাটিকে অন্য যানবাহনের চালকের দৃষ্টিগোচর করতে সহায়তা করবে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা বিভাটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরিতে রিকশাটির ব্যাটারির জন্য খরচ হবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। বাকিটা কাঠামোর খরচ। সবমিলিয়ে দেড় লাখ টাকায় এই রিকশা বাজারজাত করা সম্ভব হবে। ব্যাটারি একবার চার্জ দিলে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে।
অধ্যাপক মো. এহসান বলেন, পায়ে চালিত রিকশার কাঠামো ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলার জন্য শক্তিশালী নয়। এটিতে যে ব্রেক ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, তা সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। নতুন রিকশায় সর্বোচ্চ গতি ওঠানো যাবে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। তবে এর তিনটি চাকায় হাইড্রোলিক ব্রেক ব্যবহার করার কারণে তা নিরাপদ বলে জানান অধ্যাপক এহসান।
এদিকে, এ ধরণের নিরাপদ রিকশা রাস্তায় নামাতে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, রিকশার চালকের জন্য লাইসেন্স ও রিকশার নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে। আমরা খুব দ্রুতই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রিকশা চালকেরা আবেদন করলে আমরা তাঁদের নম্বর প্লেট দেব।
এ ধরণের জনবান্ধব রিকশা যদি দেশের প্রতিটা শহরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রিকশা চালকের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তবে দুর্ঘটনার হার অনেক কমে আসবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ জনগনও।
What's Your Reaction?






