গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য বিএফআরআই-এর

ময়মনসিংহ, ১২ মার্চ (বাকৃবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) – বাংলাদেশের একসময়ের নদী, জলাশয়ের খুব পরিচিত একটি মাছ গোটালি (বৈজ্ঞানিক নাম: Crossochelius latius)। অঞ্চলভেদে ‘কালাবাটা’ নামেও পরিচিত এই মাছটি ২০১৫ সাল থেকে বিপন্ন মাছের তালিকায় রয়েছে। কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে জনপ্রিয় মাছটি আবার পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে পরিচালিত গবেষণায় সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর বিজ্ঞানীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএফআরআইয়ের পাবলিকেশন কর্মকর্তা এস. এম. শরীফুল ইসলাম। এর মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব হলো।
জানা যায়, সাধারণত পাহাড়ি ঝর্ণা, অগভীর স্বচ্ছ নদী এবং মিঠাপানির জলাশয় গোটালি মাছের আবাসস্থল। একসময় তিস্তা, আত্রাই, সোমেশ্বরী, কংস, পিয়াইন, পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে এ মাছ সহজলভ্য ছিল। তবে জলাশয় দূষণ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, খরা মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা এবং নিষিদ্ধ জালের ব্যবহারের কারণে অন্যান্য দেশীয় ছোট মাছের মতো গোটালি মাছের সংখ্যাও দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (IUCN) মাছটিকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
গোটালি মাছ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০২৩ সালে বিএফআরআইয়ের স্বাদুপানি উপকেন্দ্র, সৈয়দপুরের বিজ্ঞানীরা তিস্তা নদীর ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকা থেকে মাছটি সংগ্রহ করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন। দীর্ঘ গবেষণার পর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সাফল্য অর্জিত হয়।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন বিএফআরআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আজহার আলী। গবেষক দলে আরও ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সোনিয়া শারমীন, মালিহা হোসেন মৌ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্রীবাস কুমার সাহা।
গবেষকদের মতে, গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে এই মাছের চাষ সম্প্রসারিত করা সম্ভব হবে, যা দেশের মৎস্য খাতে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মৎস্যচাষিদের জন্য এটি একটি আশার বার্তা। এই উদ্যোগ গোটালি মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করবে এবং বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে মৎস্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
What's Your Reaction?






