বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে বাধার ঘটনার প্রতিবাদ, লতিফুর রহমানের জবাব

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ০৩ মে (ডেস্ক রিপোর্ট/আওয়ার ভয়েস) – চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে বাধা দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ড। শনিবার শহরের জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে সংবাদ সম্মেলন থেকে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। এরপর প্রতিবাদ সভা করেন তাঁরা।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মো. আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাবেক সহকারী কমান্ডার মো. তরিকুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হক, মো. মনসুর আলী, সৈয়দ মাহতাবুল হক, শওকত আলী, আশরাফ আলী, জয়নাল আবেদিনসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা অর্ধশতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সুধীসমাবেশের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান। আমন্ত্রিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইউনিটের সাবেক সহকারী কমান্ডার মো. তরিকুল আলম বক্তব্য দিতে গিয়ে শুরুতেই বলেন, “আমার অনুরোধ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ৫ আগস্টকে মেলাবেন না।” এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সামনের সারিতে বসা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য লতিফুর রহমান উত্তেজিত হয়ে আঙুল উঁচিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল আলমের দিকে তেড়ে আসেন এবং চিৎকার করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য থামাতে বলেন। এ সময় আরও কেউ কেউ চেঁচামেচি শুরু করেন। একজন তাঁকে মাইক্রোফোন দিয়ে দিতে বলেন। এ সময় একজন পুলিশকে তাঁর হাত থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে নিতে দেখা যায়। তরিকুল ইসলাম তাঁর বক্তব্য শেষ করার জন্য অনুরোধ জানালেও তাঁকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি। পুলিশও নীরব ভূমিকা পালন করে। বিষয়টি আমাদের জন্য লজ্জাজনক ও হতাশাজনক। আমরা আপনাদের জানাতে চাই, মুক্তিযুদ্ধ ও অভ্যুত্থান এক নয়।’
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য লতিফুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, “২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সুধীসমাবেশের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। এই মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের একজন ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা বিষয় বহির্ভূত প্রসঙ্গ টেনে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কিছু না বলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের গণআন্দোলন ও অভ্যুত্থানকে পাশাপাশি তুলনা করতে গিয়ে ৫ই আগস্টকে হেয় করে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা শুরু করলে সকলে এর প্রতিবাদ করে এবং আমি বিশৃঙ্খলা থামানোর চেষ্টা করি। একইসাথে উনাকে অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য না দিয়ে শুধুমাত্র আজকের সভার জন্য নির্ধারিত বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। এই সামান্য ঘটনার সাথে জামায়াতে ইসলামীকে জড়ানোর কোন সুযোগ নেই। আমি নিজেও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে পেয়েছি আর ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র রক্ষা এবং ফ্যাসিবাদ সরকার দূর করেছে বাংলাদেশের মানুষ। যুদ্ধ করে দেশকে ছিনিয়ে আনা বাংলাদেশিরা খুব ভালো মতো দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করতে জানে। বাংলাদেশের মানুষ ৭১ কে অন্তরে লালন করে এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে সম্মান করে। যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তারা দেশকে ভালোবাসে এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চাই এবং দেশের জন্য শান্তি ও মঙ্গল কামনা করেন। আমার প্রতিবাদ এইটুকুই ছিল ৭১ এবং ২৪ দুটোই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সুতরাং ৭১ এবং ২৪ দুটোকে আমরা সম্মান করি এবং কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকি।“
What's Your Reaction?






