সারাদেশে ছড়িয়েছে বাউ মুরগী, খুশি খামারিরা

Feb 20, 2024 - 05:27
 0  75
সারাদেশে ছড়িয়েছে বাউ মুরগী, খুশি খামারিরা
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর

দেখতে হুবহু দেশী মুরগীর মতো কিন্তু উৎপাদন ব্রয়লার বা বিদেশী জাতের মুরগীর মতোই। এমন জাতের মুরগী উদ্ভাবন করেছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। এই মুরগী এবার ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে।

এ মুরগী পালন করে সফল হয়েছেন অনেক খামারী। মাত্র ৪০-৪২ দিনে এ মুরগীর ওজন ১ কেজি ছাড়িয়ে যায়। সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জেও জনপ্রিয় উঠেছে এ মুরগী। এ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আঙ্গারু গ্রামের মানুষের কাছেও এই মুরগী বাউ মুরগী নামেই পরিচিত। ইতিমধ্যে তাদের কাছে নতুন আস্থার জায়গা তৈরি করেছে নতুন এ জাতের মুরগী। শুধু আঙ্গারু গ্রামেই ৩০টির এর অধিক খামারে পালন করা হচ্ছে বাউ মুরগী। 

জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ আলী এবং অধ্যাপক  ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা দীর্ঘদিন গবেষণা করে বাউ ব্রো মুরগি বা বাউ মুরগিনাম দিয়ে নতুন জাতের দুটি  স্টেইন বা জাত উদ্ভাবন করেন। উদ্ভাবিত জাত দুটির নাম রাখা হয়েছিল বাউ-ব্রো-হোয়াইট ও বাউ-ব্রো-কালার। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এসপিজিআর প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত দেশে প্রাপ্ত মুরগির জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে ব্রয়লারের প্যারেন্ট স্টক উদ্ভাবনশীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৪ সালে গবেষণা শেষে জাত দুটি উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছিলেন গবেষকরা। বাকৃবির মুরগির জাত দুটি এখন টেকসই প্রযুক্তি হিসেবে ছড়িয়েছে সারাদেশে। প্রচলিত ব্রলার মুরগির মতো ঘরেও লালন-পালন করা যায় এ জাতের মুরগী। 

উল্লাপাড়া উপজেলার আঙ্গারু গ্রামের বাউ মুরগি খামারী শাহিদা খাতুন জানান, ‘পল্লী র্কম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে ও মানব মুক্তি সংস্থার সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে ১৫০টি মুরগি নিয়েছিলাম। এ মুরগী পালন করে মাত্র ৪৫ দিনেই গড় ওজন প্রায় ১ কেজি ৩০০ গ্রাম হয়েছে। যা বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমি আরও ৫০০টি বাউ মুরগির বাচ্চা নিয়ে পালন করবো। এই মুরগি দেশি মুরগির মতো হওয়ায় বাজারে অনেক চাহিদা।

আঙ্গারু গ্রামের আরেক খামারী আম্বিয়া খাতুন জানান, ‘বাউ মুরগি পালনে কোন সমস্যা হচ্ছে না। রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। এ মুরগি পালনে সুবিধা হলো দেশি মুরগির তুলনায় অল্প দিনে বাজারজাত করা যায় এবং অন্য মুরগীর তুলনায় ওজন ভাল আসে।

মানব মুক্তি সংস্থার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মারুফ হাসান জানান, ‘বাকৃবির উদ্ভাবিত বাউ মুরগি একটি উন্নত জাতের মুরগি। খামারের বায়োসিকিউরিটি, নিয়মিত টিকা প্রদান সহ কিভাবে মুরগী পালন করে লাভবান হওয়া যায় - সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এ মুরগী সবচেয়ে কম সময়ে বেশি গ্রোথ আসায় খামারীরা লাভবান হন।'

উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, 'বাউ ব্রো বা বাউ মুরগী পালন করে আমার উপজেলায় অনেকই লাভের মুখ দেখেছে। ব্রয়লার মুরগী অনেকের কাছেই অপছন্দের, সেখানে বাউ মুরগী তাদের কাছে খুবই পছন্দের মুরগী হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। খেতেও দেশী মুরগীর মতো স্বাদ। আমিও নিজেও অনেকগুলো খামার পরিদর্শন করেছি। এ মুরগীতে রোগ-বালাই খুবই কম হয়ে থাকে। উন্নত এ মুরগীর জাতকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাবো।

এ মুরগী উদ্ভাবকের একজন অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, ‘বাউ ব্রো এখন সবার কাছেই পরিচিত। খেতে সুস্বাদু, মৃত্যুহার কম, উৎপাদন বেশি হওয়ারর কারণেই খামারী ও ভোক্তা  পর্যায়ে এ মুরগীর চাহিদাও অনেক। আমরাও চেয়েছি এ মুরগী যেন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য শুরুর দিকে বিনামূল্যেও বাউ মুরগীর বাচ্চা সরবরাহ করেছিলাম। পরবর্তীতে খামারীদের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ মুরগী লালন-পালনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যহত রয়েছে। এসব কারণেই  দ্রুত এটা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online