বিএনপিপন্থী শিক্ষকের হাত ধরে বাকৃবিতে নতুন সাংবাদিক সংগঠন

Jun 14, 2024 - 20:14
 0  189
বিএনপিপন্থী শিক্ষকের হাত ধরে বাকৃবিতে নতুন সাংবাদিক সংগঠন
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

ময়মনসিংহ, ১৪ জুন (বাকৃবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সাংবাদিকদের একমাত্র অনুমোদিত সংগঠন বাকৃবি সাংবাদিক সমিতি (বাকৃবিসাস)। তবে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় আত্মপ্রকাশ করেছে সাংবাদিকদের নতুন সংগঠন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব। যার নেপথ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামান ও বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির বিভিন্ন সময়ে বহিস্কৃত কতিপয় সদস্য। অথচ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ছাত্রবিষয়ক বিভাগ কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।

জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহার পূর্বে ১২ জুন ছিল বাকৃবিতে শেষ কর্ম দিবস। ঈদের ছুটি শুরুর একদিন পরেই ১৩ জুন সন্ধ্যায় বাকৃবি প্রেসক্লাবের নয় (০৯) সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। সেখানে সংগঠনটিকে বাকৃবিতে সাংবাদিকদের নতুন সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাক্ষরিত কোন বিজ্ঞপ্তি তারা প্রকাশ করেনি। নতুন সংগঠনের কোন অনুমোদন বা কার্যালয়ের অস্তিত্ব না থাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলাকালীন সময়ে ফেসবুকে নতুন সংগঠনের এমন আত্নপ্রকাশে তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল।

প্রচারিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, নবগঠিত প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বাকৃবির প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও সবুজ বাংলাদেশ ২৪ ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক ড. মো. সহিদুজ্জামান (সবুজ)। কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করেছেন দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা রায়হান আবিদ। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির-২০২৩ কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসদাচরণের কারণে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কৃত হন। এছাড়া প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি দাবি করা জাহিদ হাসানের ২০২২ সালে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতিতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সদস্যপদ বাতিল করা হয়।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হয়ে একটি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি হওয়াকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি বিরল ঘটনা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। সরকারি আইন অনুযায়ী যেখানে একজন সরকারি চাকুরিজীবী চাকুরির পাশাপাশি কোন ধরনের লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে পারেন না, সেখানে নিজের নামে একটি অনলাইন পোর্টাল বানিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এই শিক্ষক। এমনকি সেই পোর্টালে কাজ করানোর জন্য তিনি ক্যাম্পাসের সাংবাদিক সমিতি থেকে যেসকল সদস্য দুর্নীতি কিংবা শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত হন, তাদের টাকা দিয়ে প্রলুব্ধ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে দাওয়াত করা না সত্ত্বেও নিজে থেকেই তার পোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকদের পাঠানো এবং প্রোগ্রামে আয়োজকদের কাছ থেকে নিউজ কভারেজের জন্য টাকা দাবি করারও অভিযোগ রয়েছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

এছাড়া জানা যায়, ড. সহিদুজ্জামান সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সোনালি দলের ২০১৩-১৪ ভেটেরিনারি অনুষদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। বিএনপিপন্থি শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও তিনি ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন এবং এই মর্মে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্রও নিয়েছেন।

প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই প্রেসক্লাব গঠনের অভিযোগের বিষয়ে ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘গঠনতন্ত্রসহ একটি আবেদন ছাত্রবিষয়ক বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তো শিক্ষকরা সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকে। বিষয়টাকে এভাবে দেখতে পারো যে, অনেক সায়েন্টিফিক জার্নালে তো শিক্ষকরা কাজ করেন, তেমনি এটা একটা নিউজ জার্নাল। এখানে আইনি তো কোন জটিলতা নেই।

তবে প্রেসক্লাব খোলার অনুমতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

বহিষ্কৃত সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে প্রলুব্ধ করে নিজের পোর্টালটিতে কাজ করানোর বিষয় এবং প্রোগ্রামে আয়োজকদের কাছ থেকে নিউজ কভারেজের জন্য টাকা দাবি করারও অভিযোগের বিষয়ে অধ‌্যাপক ড. সবুজ বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোন কমেন্ট করতে চাই না।

বিতর্কিত প্রেসক্লাব সংগঠন খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপ-পরিচালক দীন মোহাম্মদ দীনু বলেন, ‘আমার দপ্তরও এ বিষয়ে কিছুই জানে না। কোন কাগজও হাতে পাইনি। এখন তো ক্যাম্পাস বন্ধ। ভিসি স‌্যারও হজ্জে আছেন। অনুমতি ছাড়াই কিভাবে ক‌্যাম্পাসের নাম ও লোগো ব‌্যবহার করে একটি সংগঠন খুলতে পারে বিষয়টি আমার বোধগম‌্য নয়।

এদিকে, বিতর্কিত প্রেসক্লাব সংগঠন খোলার বিষয়ে কোন কিছুই জানেন না বিশ্ববিদ‌্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, আমরা এখনও এ বিষয়ে কোন কিছু অবগত নই। তারা কোন কাগজ ছাত্রবিষয়ক বিভাগে জমা দিয়েছে কি না, আমার জানা নেই। আর জমা যদি দিয়েও থাকে, সেটা তো আর অনুমতি দেওয়া হলো না। আর আমি চাইলেই কি অনুমতি দিতে পারবো নাকি? উপাচার্য ছাড়া অনুমতি দেওয়া যাবে না। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয় খুললে এবং ভিসি স্যার হজ্জ থেকে আসলে আমরা এটি নিয়ে ব্যবস্থা নিবো।

ড. সবুজের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে অনুমতি দেওয়ার কথা না। অনেক শিক্ষকই বুঝে না এটি, না বুঝেই তাঁকে সাপোর্ট দেয়। কেউ কিছু বলেও না।

বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী হজ্জে থাকায় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তারা কোন প্রস্তাবও দেই নি কিংবা আমাকে একবারও জানায়ও নি। আর আমি উপাচার্য স্যারের অনুমতি ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত কোন কিছুর অনুমোদন দেওয়া আমার এখতিয়ারে নেই।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online