কীটনাশকের সঠিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বিষয়ক কর্মশালা

Feb 11, 2024 - 08:17
Feb 11, 2024 - 08:18
 0  120
কীটনাশকের সঠিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বিষয়ক কর্মশালা
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

ময়মনসিংহ, ১ফেব্রুয়ারি (বাকৃবি প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বাংলাদেশে অধিক বিপদজনক কীটনাশক এবং রাসায়নিকের উন্নত ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা উন্নয়নশীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার কৃষি অনুষদের ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থায়নে ওই কর্মশালার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ।

প্রকল্পের টিম লিডার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. গোপাল দাস মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বলেন, অধিক ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এটি এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। মাত্রারিতিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে গিয়ে উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ শাক-সবজি খাওয়ার ফলে কিডনি ও যকৃতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হচ্ছে। তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ফসলের সঠিক উৎপাদন বজায় রাখতে এসব ক্ষতিকারক কীটনাশকসমূহের সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশের মানুষের হাসপাতালে ভর্তির কারণগুলোর মধ্যে ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহারের জন্যে ভর্তির পরিমাণ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং এর কারণে মৃত্যুহার নবম পর্যায়ে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ করেছে শ্রীলংকা। আমাদের দেশেও বর্তমানে ২১টি কীটনাশক নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তারপরেও কিছু কিছু কীটনাশক এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিকর কীটনাশক এবং রাসায়নিক শনাক্ত করা হবে, আমদানি তথ্যের জরিপ করে এদের ব্যবহারের পরিধি নির্ণয় করা হবে এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভাগের সাথে আলোচনা করে মাঠ পর্যায়ে এগুলোর প্রভাব নির্ণয় করা হবে। নিষিদ্ধ, সীমিত অথবা ব্যবহার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। পাশাপাশি ক্ষতিকর কীটনাশকের বিকল্প শক্তিশালী কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা কৌশল শনাক্তকরণ, কৃষক, ডিলার ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণা, র‌্যালি, জাতীয় ও আঞ্চলিক কর্মশালা, শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চালনা করা হবে। এলক্ষ্যে ৯টি জেলার ২৭টি উপজেলার ৬৪৫ জন কৃষক, ৫৪ জন ডিলার এবং ৫৪ জন সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সমন্বয়ে কাজ করা হবে। তাদের কাছে থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নীতি নির্ধারকদের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হবে বলে জানান তিনি।

কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফএও বাংলাদেশের সিনিয়র টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার সাসো মার্টিনোভ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী, বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহফুজা বেগম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্লান্ট প্রজেক্ট উইংয়ের পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধিবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. রমিজ উদ্দিন।

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, খাবার কি উপায়ে উৎপাদন করা হচ্ছে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে বাজারের ৭০ শতাংশ খাবারেই ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণেই এটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলস্বরূপ নানা মারণব্যাধী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের মানুষ। এটি কমিয়ে আনার জন্যে আমাদের কাজ করতে হবে। সবাই সচেতন না হলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। তবে খাদ্যের গুণগত মান বৃদ্ধিতে বিস্তর পরিসরে কাজ করতে হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online