আগামী সপ্তাহে বাজারে আসছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম

মুসা মিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগানে গুটি থেকে এখন পরিপক্ক হয়েছে আম। আমের মৌসুম ঘিরে জেলার আম বাগানগুলোতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
বাগানিরা নিচ্ছেন আম পাড়ার প্রস্তুতি। আম বাজারগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে আম বেচা-কেনার শুরু করার জন্য। ইতিমধ্যে দুইএকটা গুটি জাতের আম বাজারে আসছে। তবে চাষিরা বলছেন চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বাজারে আসবে পাকা আম। গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও থাকছে না আম ক্যালেন্ডার। আম পাড়ার কোন সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করেনি প্রশাসন। তবে অপরিপক্ক আম বাজারজাত করলে কঠোরভাবে তা দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন।
দেশের সবথেকে বড় আম বাজার চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আম বাজার। আমের মৌসুম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা আম বাগান ও বাজার দেখতে আসছেন। আম বাগান মালিকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে মুকুল ভালো ফুটলেও তাপদাহের কারণে গুটি কম হয়েছে। খরার জন্য আম বাগানে সেচ দিতে হয়েছে কয়েক বার। এতে আম উৎপাদন খরচ বেড়েছে। গবেষকরা বলছেন, আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় কয়েক দফায় মুকুল হয়েছে এবছর। প্রথম দফার মুকুলগুলো কম টিকেছে, কিন্তু পরে যেগুলো ফুটেছে সেগুলো বেশি গুটি হয়েছে।
আম বাগানের হাল
আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৫শ‘ জাতের আম উৎপাদন হয়। মৌসুমি আমের পাশাপাশি নাভি জাতের বারোমাসি আম দেশের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় এই জেলায়। আমের মৌসুম ঘিরে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্ম ব্যস্ততা জড়িয়ে থাকে আমের সঙ্গে। জেলার মহিপুর এলাকায় গোলাম জাকারিয়ার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক বাঁশ ও টিন দিয়ে কুঁড়ে ঘর নির্মাণের কাজ করছেন। জাকারিয়া বলেন, কয়েক বছর থেকে এই বাগানে আম উৎপাদন করছি। এবছর মুকুল হয়েছিল অনেক। খরার কারণে গুটি হয়নি। আবার অনেক গুটি ঝরে গেছে। গত বছরের চেয়ে আমের ফলন বেশি হলেও আশানুরূপ আম হবে না। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে পরিচর্যা বেশি করতে হয়েছে। আবার সেচ দিয়েছি কয়েকবার। এতে বাড়তি খরচ হয়েছে। আমের দাম কেমন হবে বলতে পারবো না। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে গোপালভোগসহ গুটি জাতের আম পাকতে শুরু করবে। আম পাকলে বাজারজাত শুরু করবো।
শ্রীরামপুর গ্রামের রাসেল আলির বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বাগানে রাস্তা ঠিক করছেন। পাহারাদার ও আম পাড়ার পর রাখার ঘর তৈরি করেছেন। রাসেল আলি বলেন, আর এক সপ্তাহ পর থেকে আম পাকতে শুরু করবে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে বা জুনের প্রথম সপ্তাহে গোপালভোগসহ কয়েকটি জাতের আম পাকবে। জুনের ২য় সপ্তাহে আরও কিছু জাতের আম বাজারে আসবে। গুটি কম হয়েছে এবার তবে আমের অবস্থা ভালো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং দাম ভালো পাওয়া গেলে কিছুটা লাভবান হবো।
গোবরাতলা গ্রামের আবু হানজালা বলেন, আমার বাগানে সব হাইব্রিড জাতের আম। এবছর সব গাছে মুকুল হয়নি। যেগুলো হয়েছে সেগুলো গুটি কম হয়েছিল। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সেচ দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ বেশি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। গতবারের চেয়ে বেশি আম হবে আশা করি। দাম ভালো পেলে লাভবান হবো। আর দাম কমে গেলে বা প্রতিকূল আবহাওয়া হলে লোকসান হবে।
গবেষকদের মতামত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে চলতি মৌসুমে কয়েক দফায় মুকুল হয়েছে। আবার যথাযথ সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় গুটি কম হয়েছে। তবে শেষ দফায় যেগুলো মুকুল হয়েছে প্রায় সবগুলো টিকেছে। গত বছরের চেয়ে বেশি ফলন হবে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ফল একটু আগে ও পরে পাকতে পারে। গত কয়েকদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে চলতি মাসে আবহাওয়া কিছুটা শীতল থাকলে আম পাকতে দেরি হতে পারে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে সঠিক সময়েই আম পাকবে এবং বাজারে আসবে।
কৃষি বিভাগের বক্তব্য
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত বছরের চেয়ে একশ হেক্টর জমিতে আম চাষাবাদ কমেছে। এবছর ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় চার লক্ষ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. ইয়াছিন আলী বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় আমের মুকুল হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ। তবে খরার কারণে বেশকিছু মুকুল ও গুটি ঝরে গেছে। তবে আম বাগান পরিচর্যা বিষয়ে যথাযথ সময়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমাদের মাঠ কর্মকর্তারা নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করেছেন এবং পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের উৎপাদন ভালো হবে।
What's Your Reaction?






