নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মামলা, ইউজিসির তদন্ত কমিটি

Mar 1, 2024 - 12:47
 0  64
নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মামলা, ইউজিসির তদন্ত কমিটি
ছবিঃ প্রতিনিধি/ওভি

জান্নাতীন নাঈম জীবন, পবিপ্রবি প্রতিনিধি

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) সেকশন অফিসার নিয়োগ বাতিল চেয়ে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ইসরাত জাহান অনি নামে এক ভুক্তভোগী।

মঙ্গলবার পটুয়াখালী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি করা হয়। বাদী পক্ষের আইনজীবী হুমায়ূন কবির বাদশা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমার বাদী (ভুক্তভোগী) ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করেন এবং বিজ্ঞ আদালত সমন নোটিশ ইস্যু করেছেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত, রেজিস্ট্রার (অ.দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু, ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর তিনজনসহ অন্যান্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তর। সেকশন অফিসার পদের জন্য ঢাকার বাসিন্দা ইসরাত জাহান অনি (মামলার বাদী) আবেদন করেন। ফলে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর বাদীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হলে তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষককর্মকর্তা পদে বাছাইয়ের জন্য একাধিক কমিটি গঠন করে। যা বিধিবহির্ভূত বলে বিবরণে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ড কমিটির চেয়ারম্যান উপাচার্য হওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান হন ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে রেজিস্ট্রার (অ.দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসুকে সদস্য সচিব এবং অধ্যাপক ড. পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য করা হয়।

পরে ২০২৩  সালের ১, , ৪ ও ৭ নভেম্বর নিয়ম বহির্ভূতভাবে দুটি বাছাই বোর্ড কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের ছেলে শাওন চন্দ্র সামন্ত তনু, উপ-রেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিন বাদলের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, পবিপ্রবি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েলের ভাই মো. আরিফুর রহমান পিয়েল, শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেকের ভাই মো. হাফিজুর রহমান, দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালামের ছেলে তানভীর হাসান স্বাধীন ও জেলা যুবলীগের সম্পাদকের স্ত্রী তাকছিনা নাজনীনকে সুপারিশ করে।

২ ডিসেম্বর রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় এবং সেকশন অফিসার পদে বিজ্ঞপ্তিতে ৩ জন নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও বাছাই বোর্ড ৬ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। পরে ৩ ডিসেম্বর নিয়োগ প্রাপ্তদের ডাক্তারি পরীক্ষার কথা থাকলেও ওই দিনই তারা যোগদান করেন।

বিবরণে আরও বলা হয়, সেকশন অফিসারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও টাকা লেনদেনের গুঞ্জন রয়েছে। এ প্রক্রিয়ার কারণে মামলার বাদী ইসরাত জাহান অনি উপযুক্ত প্রার্থী হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। এজাহারে সেকশন অফিসারসহ অন্যান্য পদের নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পবিপ্রবি রেজিস্ট্রার (অ.দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, "এখনো কোন কাগজপত্র পাইনি।

এর আগে ২৭ ডিসেম্বর পবিপ্রবিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাচার্যের ছেলেসহ ৫৮ জনকে নিয়োগের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৪ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের উপসচিব স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা যায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামানকে আহ্বায়ক ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম শেখকে সদস্য সচিব এবং অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপপরিচালক মো. আব্দুল আলিমকে সদস্য করা হয়েছে। সাম্প্রতিক নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি খতিয়ে দেখতে ইউসিজির তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট উক্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত কমিটি নিয়োগ সংক্রান্ত যেসকল বিষয়ে তদন্ত করে সেগুলো হলো: আর্থিক মঞ্জুরী/অনুমোদন ছাড়া নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয় আ্যক্ট ভঙ্গ করে নিয়োগ, পদবিহীন নিয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট পদে আবেদন না করেও নিয়োগ

প্রাথমিক তদন্ত শেষে দুপুর ২টায় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. ফেরদৌস জামান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত আমাদের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সরবরাহ করেছে। আমরা উভয় পক্ষের সাথে সাক্ষাৎ করেছি এবং বক্তব্য শুনেছি।

অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন এটা বলা কঠিন। আমরা দ্রুত সময়ে আমাদের তদন্ত রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিবো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

News Desk Chief Editor, Our Voice Online