জুলাই পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ: পরিবর্তন কতটুকু?

পটুয়াখালী, ২৮ মে (বিশেষ প্রতিনিধি/আওয়ার ভয়েস) – চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত গনআন্দোলনে রূপ নিলে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ ১৫ বছরের জুলুম-নির্যাতনের শাসন থেকে মুক্তি পায় জাতি। কিন্তু যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ছাত্রজনতা বৈষম্য দূর করার জন্য জীবন দিলো, দেশ গড়ার কারিগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই বৈষম্য দূর হয়েছে কি?
সম্প্রতি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টিরও অধিক পদে লেকচারার, এসিস্ট্যান্ট প্রফেসরসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ হয়। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ থেকে মাষ্টার্স, পিএইচডি, পোষ্টডক্টরেট সম্পন্ন করা ভালো সিজিপিএ ধারী মেধাবী শিক্ষার্থীরা সেখানে আবেদন করেন। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে লক্ষাধিক টাকার বিমান ভাড়া দিয়ে দেশে এসে তারা প্রেজেন্টেশন-ইন্টারভিউয়ে অংশ নেন। বিদেশ থেকে ফিরে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীরা ইন্টারভিউ, ভাইভা, প্রেজেন্টেশন মিলিয়ে টপ পারফর্ম করলেও ভিসি-প্রোভিসি মিলে নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই আগের চিরাচরিত পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
এক্সপার্ট মেম্বাররা যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করলেও উপর মহলের চাপ, আর্থিক লেনদেন, দুর্নীতি ইত্যাদি সেই একই পথ অনুসরণ করা ভিসি-প্রোভিসি অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেন। এমনকি যোগ্য প্রার্থী বাদ দেয়ার জন্য ভিসি-প্রোভিসি জামায়াত-শিবির-মৌলবাদী ইত্যাদি ট্যাগ ব্যবহার করেন যেমনটা শেখ হাসিনার আমলে করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রতি নিয়োগ হওয়া শিক্ষকদের প্রোফাইল অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, Plant Pathology, Food Microbiology, Soil Science সহ বেশ কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট এ এরকম নিয়োগ-বাণিজ্য করা হয়। বিদেশ থেকে আসা পিএইচডি-পোষ্টডক, হাই ইম্প্যাক্ট পাবলিকেশনধারী মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়োগ না দিয়ে আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করা, এমনকি পিএইচডি ছাড়া প্রার্থীদেরও নিয়োগ দেয়া হয়।
বিদেশ থেকে আসা প্রার্থীদের মধ্যে ড. ওলিউল হাসান জানান, তিনি জার্মানিতে মাস্টার্স করেছেন, দক্ষিণ কোরিয়াতে পিএইচডি-পোষ্টডক করেছেন। ৫০ এর অধিক মানসম্পন্ন পাবলিকেশন আছে। অনার্স-মাস্টার্স এর সিজিপিএ ৩.৮ এর উপরে। কিন্তু Plant Pathology ডিপার্টমেন্ট এ ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে তাকে নিয়োগ না দিয়ে নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে ভিসি-প্রোভিসির পছন্দের এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয় এবং আরেকজনকে শর্ত সাপেক্ষে নিয়োগ দেয়া হয় যাদের কারোরই দেশের বাহিরে পিএইচডি নেই। একইভাবে Food Microbiology ডিপার্টমেন্ট এ বিদেশ থেকে পিএইচডি-পোষ্টডক সম্পন্ন করা প্রার্থীদের বাদ দিয়ে পিএইচডি ছাড়া প্রার্থীকে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে প্রোভিসি প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহান সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রী এয়ার মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ভাগ্নী জামাই এবং এই পরিচয় ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার এবং নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগ অতীতেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. কাজী রফিকুল আলম এবং প্রোভিসি প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহান বলেন, তারা চেষ্টা করেছেন যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার। তবে উপরের চাপে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে অন্য প্রার্থী নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
What's Your Reaction?






